১৩ মে, ২০২৪ ২১:০৬

ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাস করলেন ইউপি সদস্য মা-খালা

নাটোর প্রতিনিধি

ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাস করলেন ইউপি সদস্য মা-খালা

নাসিমা বেগম, সোহানুর রহমান সোহান ও হালিমা বেগম

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় (ভোকেশনাল শাখা থেকে) একসঙ্গে পাস করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুই নারী সদস্য। তারা সম্পর্কে দুই বোন। এছাড়া একসঙ্গে পাস করেছে তাদের এক সন্তান। তাদের আরও এক বোন এই ইউনিয়ন পরিষদেরই নারী সদস্য।

এদের মধ্যে বড় বোন হালিমা বেগম (৪৮) ও মেজ বোন মোছা. নাছিমা বেগম (৪০) স্থানীয় বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সদস্য। তারা দুজনই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ওমর গাড়ি ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী ছিলেন। আর নাছিমার ছেলে মো. সোহানুর রহমান সোহান (১৬) নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এসএসসি ভোকেশনাল শাখা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ সোহান তার মা ও খালার সাথে এসএসসি পাস করল।

রবিবার ফল প্রকাশের পর দু-বোন ও তাদের সন্তানের সাফল্যের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এতে উচ্ছ্বসিত হয়ে তারা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন। তারা জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার কৃষ্ণপুর দিঘা ও মির্জাপুর দিঘা গ্রামের বাসিন্দা। হালিমা বেগম নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও মেজ বোন নাছিমা বেগম একই ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য।

নাছিমা বেগম জানান, ফলাফলে বড় বোন হালিমা বেগম জিপিএ-৩ দশমিক ৮৯ এবং নাছিমা বেগম জিপিএ-৩ দশমিক ৬৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাধ্যমিক পাস করা নাছিমা বেগম উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানান, লেখাপড়া করার ইচ্ছে ছিল প্রবল। অর্থাভাবে বাবার বাড়িতে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাদের দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। তারা সেসময় মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

নাছিমা বলেন, সংসারে তার দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সন্তানের অনুপ্রেরণায় দুই বোন একই সাথে ওমর গাড়ি ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন। অনেকে অনেক কথা বলেছে, তবুও হাল ছাড়েননি। সন্তানের সাথে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। আজ বোন ও ছেলের সাথে মাধ্যমিক পাস করায় খুব খুশি। ফলাফল জানার পর আশপাশের মানুষ তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

হালিমা বেগম  জানান, এই বয়সে এসে লেখাপড়া করার কথা শুনে অনেকে হাসাহাসি করেছে। এতে তারা পিছপা হননি। বরং তারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখাপাড়া চালিয়ে গেছেন। আজ (রবিবার) পরীক্ষায় পাস করার পর তাদের খুব ভালো লাগছে।

নাছিমা বেগমের ছোট ছেলে সোহানুর রহমান সোহান জানায়, নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাসুদেবপুর থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নেয়। ফলাফলে জিপিএ-৩ দশমিক ৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। মা-ছেলে একসঙ্গে পাস করায় খুব ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে মাকে সঙ্গে নিয়ে লেখা পড়া করতে চান সোহান।

বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী জানান, আমার গর্ব হচ্ছে এই ভেবে যে, ৪০ বছর বয়সের বেশি সময়ে দুইজন ইউপি সদস্য নিজেদের শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। আগামীতে তারা এই ধারা অব্যাহত রাখুক প্রত্যাশা করি।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ওমর গাড়ি ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আজিজ উল আলম বলেন, লেখাপড়া করতে বয়স লাগে না, নাছিমা ও হালিমা তা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের মতো দেশের সকলে এগিয়ে আসলে খুব সহজে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেওয়া সম্ভব হবে। মা-ছেলে ও দুই বোনের এই সাফল্য সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা।

উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালে ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একই পরিবার থেকে ৩ বোন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে বড় বোন হালিমা বেগম নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও মেজ বোন নাছিমা বেগম একই ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য। ছোট বোন শাহনাজ পারভিন সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য। এ ছাড়াও নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে তাদের মাও দুইবার সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ছিলেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর