১৬ মে, ২০২৪ ০৭:৪৫

‘পিডাইয়া লম্বা করে দেন, এটা বহু উপরের নির্দেশ’

অনলাইন ডেস্ক

  ‘পিডাইয়া লম্বা করে দেন, এটা বহু উপরের নির্দেশ’

গোলাম সারওয়ার। তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন (ডানে)

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সহযোগিতাকারীদের ‘পিটিয়ে লম্বা করে দেওয়ার নির্দেশ আছে’ বলে হুমকি দিয়েছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার।

গত মঙ্গলবার রাতে একটি নির্বাচনি সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন- “যারা তাদের সহযোগিতা করে আগে তাদের পিটাইয়া লম্বা করেন। একদম সোজা করে পিডান। এটা আমাদের বহু উপরের নির্দেশ, এটা অনেক উপরে আলোচনা হইছে।”

গোলাম সারওয়ার কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই।

তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান সারওয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদে রয়েছেন।

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজারে নিজের কাপ-পিরিচ প্রতীকের পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন তিনি। তার এই বক্তব্যের ভিডিও সোশাল মিডিয়াতেও ছড়িয়েছে। সেখানে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তাকে বলতে শোনা যায়, “যার যা আছে তা নিয়ে আপনারা প্রস্তুত হন। সাড়ে তিন হাইত্যা লাডি, আড়াই হাইত্যা লাডির চেয়ে বড় কোনো অস্ত্র অইতে পারে না। এডা আরম্ভ করেন, দেখবেন সব দালালের দালালি বন্ধ হয়ে যাবে। সব সোজা হয়ে যাবে।”

গোলাম সারওয়ার বলেন, “এই হুমকি দেওয়ার জন্য তারা কি মেশিনগান নিয়ে আসবে? আর পুলিশ প্রশাসন, বিডিআর, র‌্যাব বসে বসে আঙুল চুষবে নাকি? হেই দিন গেছে গা।

“সুতরাং যারাই স্বপ্নডা দেখেন, তাদেরকে অনুরোধ করব স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেন, এগুলা কইরেন না। মানুষের যেন রক্তক্ষরণ না হয়।”

পিঠ দেয়ালে ঠেকে’ গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখন আর পিছনে ফেরার কোনো উপায় নেই আমাদের। তার (হেলিকপ্টার প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হাই বাবুল) সাথে কিছু দালাল ঢুকে গেছে। দালালদেরকে কান্দিরপাড় পার করেন।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে এই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বলেন, “আমাদেরকে বাঁচতে হবে। পুঁটিমাছ মরতে গেলেও দশ লাইল (আইল) ঘুরে মরে। আমরা কি পুঁটিমাছের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছি? আমাদেরকে এভাবে হুমকি দেবে, ধামকি দেবে, আমরা কি বসে বসে আঙুল চুষব নাকি? আপনাদের গায়ে রক্তমাংস নাই? তাহলে আপনারা এখনও জেগে উঠছেন না কেন? বলতে হবে কেন?”

তিনি বলেন, “আপনার অধিকার আপনাকেই ফিরিয়ে নিতে হবে। একবার ফিরে দাঁড়ান, দেখবেন জীবনে আর হুমকি দিবে না। আমি আজকের এই পথসভা থেকে অনুরোধ তাদেরকে, তারা যা করতেছে এটা যেন আর না করে। সাবধান, আমাদের কিন্তু এখনও রক্তমাংস আছে। খালি আপনারাই আমাদের কিছু করবেন আর আমরা কিছু করতে পারব না, এটা ভুল।”

২১ মে ‘সুষ্ঠু-সুন্দর’ নির্বাচন দেখতে চান জানিয়ে গোলাম সারওয়ার বলেন, “প্রশাসনকে বারবার বলছি, যদি এই এলাকায় কোনো বহিরাগত ঢোকে, তাহলে আমিও লালমাই, নাঙ্গলকোট থেকে হাজার হাজার ঢুকাই দিমু এই এলাকায়। তারা সব রেডি থাকবে।

“আমরা এই এলাকায় শান্তি স্থাপন করতে চাই। শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা কোনো এলাকায় যাই না। আমাদের এলাকায়ও কেউ যেন মাতব্বরি না করে। তাদের লজ্জা থাকা উচিত।”

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “আমরা কোনো এলাকায় যাই না এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। তারা কেন এই এলাকায় এসে এত লাফালাফি করবে? কেন হস্তক্ষেপ করবে? কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদেশ অমান্য করেন?”

কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দিকে ইংগিত করে সারওয়ার বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন যেন কোনো এমপি কোনো উপজেলায় কাউকে প্রভাবিত না করে, হস্তক্ষেপ না করে। উনি (এমপি) বাহার কি প্রভাবিত করতেছেন না? কীসের জন্য? কীসের স্বার্থে?

“আমরা কী অন্যায় করছি? আমরা নাকি সব শেষ করতেছি। উনি (এমপি বাহার) কই ত্থেকে এই কথা শুনলেন? উনি কী করছেন আমরা দেখি নাই?”

তিনি বলেন, “আমরা সবাইকে সম্মান করতে চাই। উনিও আমার নেতা। উনি কেমন নেতা, যে নেতা আমাদের ভালো-মন্দ দেখবে না! আমাদের সুখ-শান্তি দেখবে না! কেমন নেতা উনি?

এসব বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী গোলাম সারওয়ার রাতে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “হ্যাঁ আমি এসব বলেছি। সমস্যা কী? এতে কি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে? আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রতিনিয়ত আমার নেতাদের হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। আত্মরক্ষার্থে আমি এসব কথা বলেছি।”

২১ মে দ্বিতীয় ধাপে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন।

হেলিকপ্টার প্রতীকের আবদুল হাই বাবলু কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের টানা তিনবারের ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বাবলু কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী।

অপর চেয়াম্যান প্রার্থী হলেন- ব্যবসায়ী ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান রিপন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, “একটি অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি প্রার্থীরা এমন কোনো বক্তব্য দেবেন না- যাতে করে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট হয়।”

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর