ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে শ্যামনগরের কলবাড়ি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চুনা ও খোলপেটুয়া নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বৃদ্ধির ফলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। দিনভর ঝড়ো বাতাস এবং থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী ও আশাশুনির প্রতাপনগর, খাজরা, শ্রীউলা ও আনুলিয়ার সাইক্লোন শেল্টারগুলিতে নারী পুরুষ ও শিশু সহ প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬৭৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বিভিন্ন স্থানভেদে ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ফলে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হবার শংকায় উপকূলে বসবাসরত মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আতংক বিরাজ করছে।
বুড়িগোয়ালিনীর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, দুপুরে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড পূর্ব পশ্চিম দূর্গাবাটি ও মাদিয়ার নদীরক্ষা বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। বিকাল ৪টার দিকে নদীতে ভাটা শুরু হলে পানির পরিমাণ কমে যায়। রাতে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে কাঁকড়া ও চিংড়ী ঘেরগুলো। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।এদিকে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীবেষ্টিত বদ্বীপ গাবুরাতে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৮নং সোরা গ্রামের মানুষ। বিকাল ৫টা নাগাদ রেমাল আঘাত না হানলেও নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে নাপিতখালী প্রাইমারি স্কুল ও চাঁদনীমুখো হাইস্কুলের শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সকাল থেকে উপকূলবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক মাইকিং করে বলা হলেও বেশিরভাগ মানুষ সহায়সম্বল ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না আশ্রয়কেন্দ্রে। ফলে ১০ নং মহাবিপদ সংকেত নিয়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন ঘেঁষা এই জনপদের মানুষ।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, সাতক্ষীরার ৬৭৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে স্থানভেদে ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে পদ্মপুকুর, দূর্গাবাটি, গাবুরার দৃষ্টিনন্দনসহ উপকূলের অন্ততঃ ২০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ইতিমধ্যে ৬ হাজার বালিভর্তি জিওব্যাগ দিয়ে এসব অঞ্চলে বাঁধ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। সার্বক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বাঁধ মনিটরিংয়ে রেখেছেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলায় ১৬৯টি সাইক্লোন শেল্টার ও ৮৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধার তৎপরতার জন্য ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ অ্যাম্বুলেন্স, ইঞ্জিনভ্যান ও নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি ও ৫ লক্ষ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ