২৮ মে, ২০২৪ ২০:০৮

ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবন, ৩৯ মৃত হরিণ উদ্ধার

বাগেরহাট প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবন, ৩৯ মৃত হরিণ উদ্ধার

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন। একটানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে চলা এই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী, গাছ-পালাসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুন্দরবনে উদ্ধার হয়েছে ৩৯টি মৃত হরিণ।

সুন্দরবনের বন ও নদী-খাল ছাড়াও লোকালয়ের কাছে নদীতেও ভেসে আসছে মৃত হরিণ। এখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্যপ্রাণীর লাশের সংখ্যা। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ওয়ারলেস ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খোদ বন বিভাগের হাতেও নেই উদ্ধার হওয়া মৃত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা।

মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, ৩৯টি মৃত হরিণ উদ্ধার করে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে আহত ১৭টি হরিণকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী প্রথম দিনে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও চর থেকে এসব হরিণ উদ্ধার করা হলেও সময়ের অভাবে বনের অভ্যন্তরে তল্লাশি শুরু করতে পারেনি বন বিভাগ।

এবারের ঝড়ে বাঘ, হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর শাবক বেশি মারা গেছে। তবে মাছ আহরণে বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় সাগরে ভেসে মারা পড়া বাঘ-হরিণসহ সব বন্যপ্রাণীর মরদেহ কখনোই উদ্ধার সম্ভব হবে না বলে বন বিভাগ নিশ্চিত করেছে।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমাল এ যাকতকালে সুন্দরবনে আঘাত হানা ঝড়ের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে সুন্দরবনের উপর এই ঝড় তাণ্ডব চালায়। ভাটার সময়ে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানি সমুদ্রে নেমে যায়। আগের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ও উঁচু মাত্রার জোয়ারের পরও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে যায়। তবে এবার রিমালের বেলায় তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। এবার একটানা ৩৬ ঘণ্টা রিমালের জলোচ্ছ্বাসে ডুবে ছিল সুন্দরবন। দীর্ঘসময় ধরে সুন্দরবন জলমগ্ন থাকায় বন্যপ্রাণীর হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের আশঙ্কা এবারের ঝড়ে বাঘ, হরিণসহ অন্যসব বন্যপ্রাণীর শাবক বেশি মারা গেছে।

সিএফ আরও বলেন, এই ঝড়ে প্রাথমিকভাবে সুন্দরবনের অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ প্রাথমিকভাবে ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যদিও বন্যপ্রাণী ও সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরীসহ অন্যান্য গাছপালার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, এটি এখনো নিরূপণ করা হয়নি। ঝড়ে বিশেষ করে সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, দুবলা, কোকিলমনি, বুড়িগোয়ালিনী, নীলকমল, মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগেকালে সুন্দরবনকে সুরক্ষায় এখন দীর্ঘমেয়াদি ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহম্মদ নূরুল করিম জানান, এখনো ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনের গাছ-পালাসহ কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর