৫ জুন, ২০২৪ ১৫:৫৪

যানজটের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বগুড়াবাসী

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

যানজটের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বগুড়াবাসী

প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বগুড়াবাসী। দিন যাচ্ছে যানজটের মাত্রা বেড়েই চলছে। ফলে ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি। এতে করে কর্মজীবী মানুষের যেমন সময় অপচয় হচ্ছে, তেমনি নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া এখন বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার অভিযান চালালেও যানজট মুক্ত হচ্ছে না শহর।

এদিকে, যানজট মুক্ত রাখতে বগুড়া শহরে ইজিবাইক-অটোরিকশা প্রবেশে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে না কেউ। দিন-রাত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। ফলে যানজট নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগের। এ ছাড়াও যেখানে সেখানে গাড়ি-অটোরিকশার পার্কিং, সড়কের উপর ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফুটপাত দখল করাসহ প্রতিনিয়ত নানা কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বগুড়া শহরে।

জানা যায়, উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম শহর বগুড়া। একই সাথে বাণিজ্যিক শহর বলে জেলায় প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। তারা ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানা কাজে বগুড়ায় আসেন। যার ফলে বগুড়া শহর সবসময় সরগরম থাকে। এদিকে দিন দিন পাল্লা দিয়ে শহরের অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইচ্ছামতো যত্রতত্র রিকশা স্ট্যান্ড বসিয়ে যানজটের সৃষ্টি করছে। অবৈধ অটোরিকশার জটে অতিষ্ঠ সাধারণ জনগণ। এদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছ।

বিশেষ করে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে শহরে আগের চেয়ে যানজট দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। যানজটে শহরবাসীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এবং মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যে কোনো সময় সড়কে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এতে করে বগুড়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমছে। এ ছাড়া যানজটে প্রতিনিয়ত মানসিক চাপ নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। আইনের তোয়াক্কা করছেন না কেউ। পথচারীরাও বেপরোয়া। সকালে কর্মস্থলে যেতে মানুষের ব্যস্ততা বেশি থাকে। একই সময়ে শিক্ষার্থীরাও স্কুল-কলেজে যাতায়াত করেন। এ সময়ে যানবাহন চলাচলের ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় শহরবাসীকে। বগুড়ার এমন চিত্র প্রতিদিনের।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। বিশেষ করে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, স্টেশন সড়ক, শেরপুর সড়ক, নবাববাড়ী সড়ক, মফিজ পাগলা মোড়, ঠনঠনিয়া, পিটিআই, সরকারি কলেজ, ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড় এলাকায় অস্থায়ীভাবে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশা, চার্জারে চালিত বিভিন্ন অটোগাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। একই সঙ্গে শহরের দত্তবাড়ি, বড়গোলা, থানা মোড়, খান্দার, নামাজগড়, টিনপট্টি মোড়, তিনমাথা রেলগেট, চেলোপাড়া মোড়, জলেশ্বরীতলাসহ সকল সড়কেই যানজট লেগে থাকে। এসব পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। চালকরা মানছে না ট্রাফিক আইন।

জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, শহরে যানজট ও জনদুর্ভোগ কামানোর জন্য অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এজন্য শহরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি কেউ নিয়ম ভেঙে শহরে প্রবেশ করলে সেই সব যানবাহন আটক করা হচ্ছে।

বগুড়া শহরের ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া জানান, শহরে প্রায় লক্ষাধিক অটোরিকশা, ইজিবাইকের অদক্ষ চালকরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা মানছেন না কোনো ট্রাফিক আইন। যত্রতত্রভাবে করছে পার্কিং, রং সাইড, রাইট সাইড এবং কোনো সিগন্যালে তোয়াক্কা নেই তাদের। সড়কের এক পাশ থেকে অপর পাশে পার হওয়া কষ্টসাধ্য। প্রতিদিন শহরবাসী যানজটে পড়ছে।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক এগুলোতে সরকারের অনুমতি নেই। এরপরেও প্রতিদিনই অসংখ্য নতুন রিকশা রাস্তায় নামছে। এসব যানবাহনের কারণে শহরে যানজটে অস্থির হয়ে পড়ছে মানুষ। যানজট নিরসনে পৌরসভা সবসময় তৎপর রয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, বগুড়া শহরের যানজট নিরসনে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। যানজট নিরসন ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানো ট্রাফিক পুলিশের মূল লক্ষ্য। কিন্তু ট্রাফিকের জনবল কম হওয়ায় ব্যস্ততম শহরে মাঝে-মধ্যে যানজট লেগে যায়। তবে যানজটের মূল কারণ হচ্ছে অধিক পরিমাণ অবৈধ অটোরিকশা-ইজিবাইক বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়াও শহরের রাস্তার ধারণ ক্ষমতার অধিক যানবাহন চলাচলের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। বগুড়াবাসী যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেজন্য পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর