আদিকাল থেকে গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে কদর ছিল কামার শিল্পের। তাদের তৈরি কোরবানি করার অন্যতম অনুষঙ্গ ছুরি, চাকু দা, বটি চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করতো সবাই। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আর আধুনিক মেশিনে তৈরি চাইনিজদের সরঞ্জামে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় কামার শিল্পে পড়েছে ভাটা। যার ফলে অলস সময় কাটছেন বগুড়ার কামার শিল্পীরা।
জানা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অলস সময় পার করছেন বগুড়া জেলার কামার শিল্পীরা। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানির মৌসুমে বেশ ব্যস্ততা বেড়ে যেতো কামার পাড়ায়। দিনরাত সমান তালে লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রতিটি কামার ঘর। অনেকেই আসতো কোরবানি করার অন্যতম অনুসঙ্গ ছুরি, চাকু দা, বটি চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করতে। আবার কেউবা আসতো এসব সরঞ্জাম শান দিতে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আর আধুনিক মেশিনে তৈরি চাইনিজদের সরঞ্জামে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় কামারশিল্পে ভাটা পড়েছে। যে কারণে এবার কামার পল্লীতে নেই ঈদের আমেজ। এক সময় কোরবানির ঈদের সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকতো কামারপাড়াগুলো। পেশায় ভাটা পড়ায় দিন দিন কামার শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় পাওয়া পেশা ছেড়ে খুঁজে নিচ্ছেন অন্য পেশা। এতে এই শিল্পটি হারানোর মুখে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকার কামার পাড়া ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। কোরবানির ঈদের মাত্র দুদিন বাকি থাকলেও কামার দোকানগুলোতে নেই আগের মত ক্রেতাদের ভিড়। ভালো ব্যবসার আশায় বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা কামার শিল্পীদের আশানুরূপ বিক্রি নেই।
বগুড়া শহরতলী বনানী বাজারের কামার শিল্পী অনিল কর্মকার জানান, চাইনিজদের তৈরি আধুনিক যন্ত্রপাতির দখলে বগুড়ার বাজার। যার ফলে এখন আর কদর নেই কামারশিল্পীদের। বংশ পরম্পরা ধরে রাখতেই এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছি। আমার বাপ-চাচারা এরকম ঈদ মৌসুমে দিন-রাত কাজ করতো। টানা পরিশ্রম করেও ক্রেতার চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দিন দিন চাহিদা কমছে কামার শিল্পীদের।তিনি আররো জানান, কয়লা-লোহার দাম বেড়েছে, সে তুলনায় মজুরি পাই না। আগের চেয়ে খরচও অনেক বেশি। বর্তমানের বাজারে লোহা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০টাকা কেজি। ভালোমানের দা তৈরি করতে খরচ পড়ে এক হাজার টাকা, বড় চাকু দেড় হাজার টাকা, বটি ৮০০টাকা। আমাদের তৈরি জিনিস ভালো হলেও ক্রেতারা চাইনিজদের তৈরি সরঞ্জামে বেশি ঝুঁকছেন।
বগুড়া শহরের ২নং রেলঘুনটি রাজাবাজার এলাকার ববসায়ী সাব্বির হোসেন জানান, কোরবানীর ঈদকে ঘিরে চাইনিজদের তৈরি সরঞ্জামের চাহিদা বেশি। টেকসই ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতারাই চাইনিজদের তৈরি দা, বটি, চাকু, ছুরি কিনছেন। তাই ঈদুল আযহায় প্রচুর পরিমাণ বেচাকেনা হচ্ছে।
এক সময় কোরবানির ঈদের আগে কামারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যেত। তবে দিন দিন চাইনিজদের আধুনিক মেশিনে তৈরি গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত পণ্য বাজার দখল করে নেওয়ায় কামারদের ব্যবসায় ধস নেমেছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম