২০ জুন, ২০২৪ ১৮:৪০

বিপৎসীমার উপরে তিস্তার পানি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বিপৎসীমার উপরে তিস্তার পানি

উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ব্যারেজ পয়েন্টে পানি ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ।

পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গরীবুল্লাহ পাড়া, বারোঘরিয়া, গোবরধন, সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার অন্তত ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়া এসব নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনসহ নানা ভোগান্তি। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষকের ধান, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। আর বাড়িঘরে পানি থাকায় খাওয়া, ঘুমসহ সকল কাজে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটির বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, গত তিনদিন ধরে বাড়িতে পানি থাকায় চুলা জ্বালাতে সমস্যা হচ্ছে। সাইদুলের স্ত্রী বলেন, দিনে একবার রান্না করাই কষ্টকর। এছাড়া গৃহপালিত পশুর খাদ্য জোগানেও বেগ পেতে হচ্ছে।

একই এলাকার নদী তীরবর্তী বাসিন্দা সহিদার রহমান (৫৫) বলেন, গত তিনদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার রাত ১১টার দিকে হঠাৎ পানির চাপ বৃদ্ধি পায়। পানির ভয়ংকর শব্দে রাতের ঘুম হারিয়ে যায়। রাতে তার প্রতিবেশীর বাড়ির একটি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন এলাকার বাসিন্দা জোবায়ের হোসেন বলেন, তিস্তার ভয়াল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে কতজন এসে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এখন তিস্তায় পানি বাড়লে আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে। বাড়িঘর, রাস্তায় পানি থাকায় চলাফেরাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়।

একই মন্তব্য করেন আদিতমারী উপজেলার বারোঘরিয়া, গোবরধনসহ তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দী পরিবারের লোকজন। তাদের দাবি, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আসায় অল্প পানিতে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় অবস্থিত তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.০৭ মিটার যা বিপৎসীমার মাত্র ৮ সেন্টিমিটার নিচে। একই সময় তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয় ২৯.০০ মিটার  যা বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপরে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ লালমনিরহাটের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি দ্রুত নেমে যাবে। নদীতে পলি পড়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পানি কমে গেলে কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিতে পারে। নদী ভাঙন ঠেকাতে জরুরি আপদকালীন কাজ হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর