শিরোনাম
২৯ জুন, ২০২৪ ১৭:৪৮

পঞ্চগড়ের কাজের হাট ‘থারো হাটি’

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ের কাজের হাট ‘থারো হাটি’

পঞ্চগড় জেলা শহরের সিনেমা হল রোডের দুই প্রান্তে ভোর সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকে কিছু নিম্ন আয়ের নারী পুরুষ। তারা সবাই শ্রমিক। দাঁড়িয়ে কাজের সন্ধানে অপেক্ষায় থাকে বলেই এই জায়গাটাকে কেউ বলে ‘থারো হাটি’, আবার অনেকে বলে ‘কামলা হাটি’। এখানে এলে সবাই কাজ পায়।

দাঁড়িয়ে কাজের অপেক্ষায় থাকা এসব নারী পুরুষের কারও নিজের বাড়ি নেই। ভারা বাড়িতে থাকেন। কারও আপন বলে কেউ নেই। কেউবা লেখাপড়া করছেন। কেউ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। ছেলে মেয়েরা তাদের খোঁজ নেয় না। আবার কারও পরিবারে খাবার সংকট। এমন সব দরিদ্র মানুষরা ভোরবেলা থেকে কাজের সন্ধানে দাঁড়িয়ে থাকেন দুপুর পর্যন্ত। অপেক্ষায় থাকেন আরেক মানুষের জন্য, যিনি এসে তাদের নিয়ে যাবেন। সারাদিন কাজে খাটাবেন। তারপর সন্ধ্যা বেলায় দেবেন দিনের পারশ্রমিক। এখানে একদিনের জন্য হয় মানুষ কেনা বেঁচা। বিভিন্ন কাজে যাদের শ্রমিক প্রয়োজন তারা এখানে এসে অপেক্ষমাণ শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারপর দর-কষাকষি হয়। কারও সঙ্গে দাম ঠিক হলে একদিনের জন্য শ্রমিকদের নিয়ে চলে যায় কাজে।

অপেক্ষমাণ শ্রমিকরা বলছেন, অনেকে কাজ পায়, অনেকে পায় না। গ্রাম থেকেও কাজের সন্ধানে আসেন অনেকে। তারা বলছেন কাজ কমে গেছে। ধনাঢ্য কৃষকরা আর নিজেরা কৃষির চাষ করেন না। কারণ তারা নিজে মাঠে খাটতে পারেন না। শ্রমিকের ব্যয় আর সার কীটনাশকের দাম মিটাতে গিয়ে লোকশান করে। তাই তারা নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে জমি বন্ধক দিয়ে দিচ্ছেন। যারা জমি বন্ধক নিচ্ছেন, তারা নিজেরাই ক্ষেতে কাজ করেন। শ্রমিক প্রয়োজন হয় না। তাই কাজও কমে গেছে।

শহরের অদূরের গ্রাম ফুলতলা থেকে ২৫/৩০ বছর ধরে কাজের খোঁজে এখানে আসেন খয়রুল ইসলাম। বয়স তার ৭৮ বছর। তিনি জানান, এই বয়সেও কাজ করলে ভালো লাগে। বসে থাকলে শরীর ভারী হয়। আমার এক ছেলে। দুই বিয়ে করে নিজের সংসার নিয়েই বিপদে আছে। আমি সব কাজ করতে পারি। এখানে ভোরবেলা আসি। দিনে ৭ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়। কোনো দিন হয় না।

রামের ডাঙ্গা এলাকায় একজন মানুষের বাড়িতে থাকেন মোমেনা বুড়ি (৫৫)। দীর্ঘদিন থেকে থারো হাটিতে কাজের সন্ধানে আসেন বলে তার পরিচিতি অনেক। সবাই তাকে মোমেনা বুড়ি হিসেবে ডাকে। তার কেউ নেই। স্বামী নেই, সন্তান নেই।

তিনি বলেন, ‘মানুষের বাড়িত রহচু। সব কাম করবা পারছু মুই। মোক কাহ একখান ঘর দেয় নাই। দিনে ৩শ/৪শ টাকা হচে। কোনো দিন হয়না। সেলা হোটেলত কাজ করে খাবার টা হচে।’ 

এখানে দাঁড়িয়ে থাকা কাজ সন্ধানী নারী পুরুষরা সব ধরনের কাজই করে দেয়। কেউ বাড়ির কাজ করে। কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কেউ মাটির কাজ। কেউ কৃষিকাজ করেন। অনেকে প্রায় ২৫/৩০ বছর ধরে কাজের সন্ধানে আসছেন এই থারোহাটিতে। 

স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় ৫০/৬০ বছর আগে থেকে এখানে কাজের লোকের প্রতিদিন হাট বসে। অনেকে সুপরিচিতও হয়ে উঠেছেন। এই হাটকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীও গড়ে উঠেছে। তারা কাজের শ্রমিক খুঁজে দেয়। বিপরীতে তারা বকশিশ পায়। অনেক শ্রমিকের সাথে তাদের পূর্ব থেকেই যোগাযোগ থাকে। তারা এসে অপেক্ষমাণ শ্রমিকদের সাথে দিনের কাজের চুক্তি করে। বয়স এবং কাজ ভেদে তাদের হাজিরার মূল্য দেওয়া হয়।

কাজ সন্ধানী এসব মানুষদের অভিযোগ সরকারিভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও তারা কিছুই পান না। তারা চান সরকারি সহযোগিতা।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা চাহিদা সম্পন্ন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যারা পায়নি তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হবে এবং সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর