৩ জুলাই, ২০২৪ ২০:০৬

ভৈরবে হত্যা মামলায় চারজনের মৃত্যুদণ্ড

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ভৈরবে হত্যা মামলায় চারজনের মৃত্যুদণ্ড

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অটোচালক সোহেল ওরফে বদন খন্দকার (৩৮) হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও তাদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার বিকালে কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ রায় ঘোষণা করেন। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন ভৈরব উপজেলার ছনছড়া গ্রামের মৃত লতিফ মিয়ার ছেলে মো. লিটন মিয়া (২৫), একই গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে মো. রব্বানী (২৫), ভাটি কৃষ্ণনগর গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া (২৪) ও বাঁশগাড়ি গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে মো. কাজল (৩৩)। নিহত সোহেল ওরফে বদন খন্দকার কুলিয়ারচর উপজেলার মাইজপাড়া গ্রামের আজিজুল ইসলাম খন্দকারের ছেলে। কিশোরগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট আবু নাসের মো. ফারুক সনজু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

মামলার এজাহার ও ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সোহেল অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে। দুপুরে দাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ডে অটো রেখে বাড়িতে খেতে আসেন। পরে দুপুর আড়াইটায় দাড়িয়াকান্দি থেকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে ডুমরাকান্দা বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে তিনি আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। রাত ৯টার দিকে স্ত্রী সরুফা তার মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি। পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে লোকমুখে সংবাদ পেয়ে পরিবারের লোকজন ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকার ফারুক চেয়ারম্যানের বাড়ির ২০০ গজ দক্ষিণে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর নিহত সোহেল ওরফে বদন খন্দকারের পিতা আবদুল হান্নান খন্দকার বাদী হয়ে ভৈরব থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

মামলাটি প্রথমে ভৈরব থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে পিবিআইয়ে ন্যস্ত হয়। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক জামিল হোসেন জিয়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেন। পরে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে সন্দেহভাজন আসামি লিটন মিয়াকে (২৫) ভৈরবের সম্ভুপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত আসামি পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তার জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি রব্বানীকে (২৫) ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ভৈরবের শিমুলকান্দি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর অপর আসামি কাজল (৩৪) ও জুয়েল মিয়াকে (২৪) গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামি লিটন, কাজল ও জুয়েল আদালতে স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। 

মামলাটির তদন্তে পুলিশ জানতে পারে ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভৈরবের শিবপুর বাজারে একটি পুড়ি-সিঙ্গারার দোকানের সামনে বসে আসামি লিটন, রব্বানী, জুয়েল ও কাজল অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। ঐদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভৈরবের দূর্জয় মোড় বাসস্ট্যান্ড থেকে কালিকাপ্রসাদ যাওয়ার কথা বলে সোহেল ওরফে বদন খন্দকারের অটোরিকশাটি ১০০ টাকায় ভাড়া নেন। ইজিবাইকটি কালিকাপ্রসাদের একটি ফাঁকা জায়গায় পৌঁছামাত্র আসামি রব্বানী প্রস্রাব করার কথা বলে ইজিবাইকটি রাস্তার পাশে থামায়। পরে চালক বদন খন্দকারকে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলে এবং সাথে থাকা লোহার রড দিয়ে তার নাকে, মুখে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার মোবাইল ফোন ও ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যার পর ভৈরবের মুসলিম মোড় ব্রিজের কাছে অজ্ঞাত এক লোকের কাছে ৩০ হাজার টাকায় ইজিবাইকটি বিক্রি করে। এই ত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে কাজল ৭ হাজার, রব্বানী ৭ হাজার, জুয়েল ৩ হাজার এবং বাকি টাকা নিয়ে যায় লিটন।

ঘটনার দুই/তিন মাস পর আসামি লিটন মিয়া অপর আসামি রব্বানীর শ্যালক জুয়েল মিয়ার মোবাইলের দোকানে মোবাইলটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে। জুয়েল মিয়া মোবাইলের লক খুলে সেটি ভৈরবের শিমুলকান্দি ইউনিয়নের বাইশমা মধ্যপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা জয়নাল আবেদীনের কাছে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে। 
পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. জামিল হোসেন জিয়া ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর