৪ জুলাই, ২০২৪ ১৯:৫৩

গাইবান্ধায় দুই নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে, পানিবন্দী ২০ হাজার পরিবার

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধায় দুই নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে, পানিবন্দী ২০ হাজার পরিবার

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এদিকে করতোয়া নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ফলে এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২০ হাজার পরিবার। তবে কমেছে তিস্তার পানি।

বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে- গত ২৪ ঘণ্টায় উচ্চতা ৫৭ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেমি ও ঘাঘট নদীর পানি ৫১ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৩ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে করতোয়া নদীর পানি ৬২ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৬০ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তিস্তা নদীর পানি ১৭ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৪৩ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার।

জানা যায়, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করে। এ কারণে নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট। এসব এলাকার বেশকিছু ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন ফসলাদি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। ফলে এসব এলাকার মানুষের বন্যা আতঙ্কে দিন কাটছে।

নদ-নদীগুলোর পানিবৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকায় প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানিবৃদ্ধির ফলে নিচু এলাকার ঘরবাড়িগুলোতে পানি জমতে শুরু করেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার পানিবন্দী মানুষরা গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। এদিকে তিস্তার পানি কমতে থাকায় সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুরের প্লাবিত এলাকা জেগে উঠতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে যমুনার পানির চাপে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার দুপুরের দিকে উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যাবাজার এলাকায় যমুনার পানির চাপে বাঁধের অন্তত ৩০ ফিট এলাকা ধসে যায়। এতে ভরতখালী ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকাসহ ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল, খামার পবনতাইড়, হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বেড়া, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি, পাতিলবাড়ী, গুয়াবাডী, কালুরপাড়া, কানাইপাড়া, কুমারপাড়া এবং জুমারবাড়ী ইউনিয়নের কাঠুর, থৈকরের পাড়া ও পূর্ব আমদিরপাড়াসহ কমপক্ষে ১৫টি মৌজার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এ উপজেলার কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় এসব এলাকার বিস্তৃর্ণ জমির পাট, কাউন, তীল ও শাকসবজিসহ বর্ষাকালীন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যাকবলিতরা।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজনের ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বাড়ছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। তবে কমেছে তিস্তার পানি। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, শুকনা খাবার, জি আর চাল, ক্যাশ মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পিড বোট প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রচার প্রচারণা চলমান রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ 

সর্বশেষ খবর