৭ জুলাই, ২০২৪ ১৬:২৫

সিরাজগঞ্জে বন্যায় দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

সিরাজগঞ্জে বন্যায় দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

যমুনায় পানি বৃদ্ধিতে বন্যায় সিরাজগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। পানিবন্দী মানুষের কর্মসহ রান্নার চুলা তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ল্যাট্টিন তলিয়ে যাওয়ায় বাথরুমের চরম সম্যসা দেখা দিয়েছে। শিশুদের শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। সার্বক্ষণিক পানিতে থাকায় হাত-পায়ে ঘা দেখাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যাকবলিতরা। 

বন্যায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। সহস্রাধিক তাঁত কারখানা তলিয়ে যাওয়ায় মালিক ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধিতে যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন মানুষ ফসল ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। বন্যা কবলিতদের মাঝে এখনো কোন সহায়তা না পৌছায় তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বলছেন, বন্যা কবলিত ৫টি উপজেলার মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

জানা যায়, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে বিপদসীমার ৬১ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলা সদর, কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিববন্দী রয়েছে। পানি বাড়ায় ৫টি উপজেলার যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় প্রতিদিন বসতভিটা ও ফসলী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। 
বাঐতারা গ্রামের আকলিমা খাতুন জানান, বসতভিটা তলিয়ে গেছে। টিউবওয়েল তলিয়ে গেছে। চুলা তলিয়ে গেছে। কোন রকমে একবেলা রান্না করে পানির মধ্যেই বসবাস করছি। এতো কস্টে থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরা কেউ খোজ নিতেই আসেনি। 
একই গ্রামের আজগর আলী জানান, তাঁত কারখানা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে চরম কস্টে দিনযাপন করছি। খেয়ে না খেয়ে দিন পারছি। বাড়ীসহ চারপাশে আশপাশে পানি থৈথৈ করছে। চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে চলাচল করায় হাত পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। ওষুধ কেনার পয়সা নেই। খবু কষ্টে দিনযাপন করছি। কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, আউশ, আমন ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় চরম ক্ষতি হচ্ছে। 
পাঁচিল গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বন্যার শুরু থেকেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ভাঙ্গনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। 
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ঠান্ডু জানান, একদিকে বসতবাড়ীতে পানি ওঠেছে অন্যদিকে নদীর তীর ভাঙ্গছে। এতে কাওয়াকোলা ইউনিয়নের মানুষ দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নের অর্ধেকাংশ জায়গাসহ তিন থেকে চার শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছোট ভাইয়ের বসতবাড়ীও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরাঞ্চল হওয়ায় পাউবো ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সুত্রধর জানান, বন্যায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির পাট, সবজি, আউশসহ কৃষকের নানা ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান জানান, বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ৯৫ মে.টন চাল ও ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ মে.টন চাল বিতরনের জন্য উপজেলা পর্যায়ে দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বিতরন শুরু হয়েছে। বাকী বিতরন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও ১৮০ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, ভাঙ্গন রোধে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি স্থির রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানি হ্রাস পেতে পারে। 

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর