৮ জুলাই, ২০২৪ ১৬:৫১

স্কুল মাঠে হাট, পাঠদান ব্যাহত

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

স্কুল মাঠে হাট, পাঠদান ব্যাহত

নওগাঁর বদলগাছীতে ৪টি স্কুল মাঠে হাট বসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকবৃন্দ বিপাকে পড়েছেন। এতে স্কুলগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, বদলগাছী সদরে অবস্থিত সরকারী মডেল পাইলট হাইস্কুল ও মডেল সরকারী প্রাথমিক স্কুল একই স্থানে অবস্থিত। দুই স্কুলের শিক্ষার্থীরা একই মাঠ ব্যবহার করে। সেখানে সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার দুইদিন হাট বসে। সরকারী ছুটির কারণে এখন শনিবার স্কুল বন্ধ থাকে। তবে শনিবারেও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষা চলে। ইতিপূর্বে যখন শনিবার স্কুল খোলা থাকতো তখনও শনিবার-বুধবার স্কুলমাঠ দখল করে ইজারাদার হাট বসাতো। 

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাঁচা তরিতরকারির পাইকারী কেনাবেচা হয়। দুরদুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল ক্রয় করে বড় বড় ট্রাকে লোড করেন। যার ফলে মাঠের অধিকাংশ গর্তের সৃষ্টি হয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি বেঁধে থাকে। ফলে ব্যপক কাদাযুক্ত হয়ে মাঠের মধ্যদিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। হাটের দিনগুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষর্থীরা হাটের মধ্যে দিয়ে হাঁঠতে গিয়ে জুতা প্যান্ট কর্দামাক্ত হয়ে ঠেলাঠেলি করে স্কুলে পৌঁছে। অনেক ছাত্রী হাটের মধ্যে ইভটিজিং এর শিকার হলেও লজ্জায় বিষয়টি কাউকে বলতে পারে না। 

আবার বদলগাছী হাটের দক্ষিন পাশ দিয়ে পাবলিক লাইব্রেরী ঘেষে প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার জন্য ইটের হেয়ারিং রাস্তা থাকলে ও রাস্তাটি হাটের দিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও দুধ বিক্রেতাদের দখলে থাকায় শিশু শিক্ষার্থীরা খুব কষ্ট করে অভিভাবক মা-বার হাত ধরে কোনরকমে স্কুলে পৌঁছে। 

উপজেলার সর্ববৃহৎ কোলাহাটে রয়েছে আদর্শ ডিগ্রী কলেজ, বিজলী হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলসহ ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে সপ্তাহে দুইদিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার হাট বসে। কোলার হাট জেলার বিখ্যাত গুরু-ছাগল ও কাঁচামালের বৃহৎ হাট। সেখানে ও স্কুল এবং কলেজের মাঠ দখল করে ইজারাদারেরা হাট বসান। স্কুল ও কলেজের দিনে শিশু শিক্ষার্থী, হাইস্কুলের শিক্ষার্থী ও কলেজের শিক্ষার্থীদের হাটের দিনে চরম বিপাকে পড়তে হয়। হাটের লোকজনের কোলাহলে সেখানে ও পাঠদান ব্যাহত হয়। ভান্ডারপুরেও ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভান্ডারপুর দ্বি-মুখী হাইস্কুল, সরকারী প্রাথমিক স্কুল ও সাবিত্রি বালিকা বিদ্যালয়। সেখানে ও সপ্তাহে দুইদিন রবিবার ও বৃহস্প্রতিবার স্কুল মাঠ দখল করে হাট বসে। এতে করে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাতায়াত করতে চরম বাঁধার সম্মুখীন হয়ে পরে। 

উপজেলার আর একটি বৃহৎ হাট গোঁবরচাপা। সেখানে ও ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ডিগ্রী কলেজ, হাইস্কুল ও সরকারী প্রাথমিক স্কুল। তার মধ্যে ডিগ্রী কলেজ গোঁবরচাপা হাট থেকে সামান্য পূর্বে দিকে অবস্থিত। আর হাইস্কুল ও সরকারী প্রাথমিক স্কুল এক সঙ্গে অবস্থিত। মুলত এই দুই স্কুল মাটে সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার হাট বসে। সেখানে ও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্কুল মাটে কাঁচামালের পাইকারী কেনাবেচা হয়। 

বদলগাছী সরকারী মডেল পাইলট হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাফ্ফর হোসেন, কোলা বিজলী হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পার্থ কুমার, ভান্ডাপুর দ্বি-মূখী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন ও গোঁবরচাপাহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ মামুন একই সুরে বলেন, স্কুলের দিন স্কুল মাঠে হাট বসানোর কারণে শিক্ষার্থীদের চলাচল ও শিক্ষকদের পাঠদান ব্যাপকভাবে বিঘ্ন ঘটে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না। কিন্তু কি আর করার। দীর্ঘদিন থেকে হাট ইজারাদারেরা স্কুল মাঠ দখল করে হাট বসায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সাবেক এমপিদেরকে অবগত করেও লাভ হয়নি। 

বদলগাছী সদরের হাট ও গোবরচাঁপা হাট ইজারাদার জনি জানান, বদলগাছী সদরের স্কুল মাঠে হাট বসার কারণে যে ক্ষতি হয় তা খরা মৌসুমে বালু মাটি ফেলে মাঠ সংস্কার করে দেয়া হয়। আর গোবরচাঁপাহাট স্কুল মাঠে হাট বসে তার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে টাকা দেওয়া হয়। কোলাহাট ইজারাদার ফেরদৌস হোসেন জানান, স্কুল ও কলেজের মাঠ ব্যবহার করার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের ডনেশন দিতে হয়। এতে করে হাট ইজারা নেওয়ার পর ও অতিরিক্ত টাকা খরচ করে হাট চালাতে হয়। 

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, বিষয়টি নজরে রয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত স্কুল মাঠ থেকে হাট স্থান্তান্তরের প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর