নরসিংদীর রায়পুরায় পৃথকভাবে ট্রেনে কাটা পড়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা গামী মেইল ট্রেনে কাটা পরে ৫ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কাললী এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে আরো ১ জনসহ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়। 

রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেইট এলাকায় দুই কিলোমিটার অদূরে পলাশতলী ইউনিয়নের খাকচর কমলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রেল পুলিশ, পিবিআই পুলিশ, সিআইডি পুলিশ, রায়পুরা ও জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল এসে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে। 

নিহতের ছেলে বিপুল সুত্রধর জানিয়েছেন, রোগী দেখার জন্য সকালে রায়পুরায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন আমার বাবা। সেখান থেকে কিভাবে তিনি মেতিকান্দা স্টেশন এলাকায় আসেন, তা বুঝতে পারছিনা। 

এদিকে সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৫ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। নিহত সকলেই পুরুষ। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সবগুলো মরদেহ কাছাকাছি হওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেইট এলাকায় পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুরে রেল লাইনের পাশে ছিন্নভিন্ন ৫ টি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। রেল পুলিশ, পিবিআই ও জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল এসে নিহতদের মরদেহ উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। একই সাথে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তবে কি কারণে বা কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি রেল পুলিশ ও রেল কর্তৃপক্ষ। 

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও রেল কর্তৃপক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলা হলেও ৫ জনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। সর্বশেষ স্টেশনে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। ভোরে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা গামী মেইল ট্রেনটি মেতিকান্দা স্টেশন অতিক্রম করার সময় সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ট্রেনটির ছাদে কয়েকজন যাত্রী ছিল। তবে এই যাত্রীরাই কি মারা গেছেন কিনা সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা একটি টেঁটাযুদ্ধ প্রবণ এলাকা। কিছু দিন পর পরই এই অঞ্চলের চরাঞ্চলে ভংয়কর টেঁটা যুদ্ধসহ সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো পক্ষ নিহতদের হত্যার পর লাশ রেল লাইনে ফেলে গেছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।  অপর দিকে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে কিনা সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। 

নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে এসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরীরগুলো একত্র করেছি। এরপরই পরিচয় শনাক্তের জন্য নরসিংদীর পিবিআই সদস্যদের খবর জানিয়েছি। বেলা সাড়ে ১১টায় তারা ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্তের প্রক্রিয়া শুরু করে।

মেথিকান্দা স্টেশনের স্টেশনমাস্টার আশরাফ আলী বলেন, তারা ট্রেনের ছাদ থেকে পিছলে পড়ে কাটা পড়েছেন, নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত ব্যক্তিরা স্থানীয় কেউ নন বলে জানা গেছে। লাশ উদ্ধারের আগে ওই রেললাইন দিয়ে আরও তিনটি ট্রেন চলাচল করেছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। এসময় তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের লাশের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে পিবিআই। তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। সকল প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য  লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে ঠিক কীভাবে এই পাঁচজন ট্রেনে কাটা পড়লেন, বা মারা গেছেন তা তদন্ত করে এর কারণ অনুসন্ধান চলছে। নিহতদের ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করতে পারলে রেলওয়ে বিভাগের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন এই কর্মকতা।  

এদিকে ৫ জন নিহতের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সামসুল আরেফীন, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলাম, রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন ও ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল আলীম।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল