৯ জুলাই, ২০২৪ ১৬:৪৩

গাইবান্ধায় কমছে পানি, কমেনি দুর্ভোগ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধায় কমছে পানি, কমেনি দুর্ভোগ

গাইবান্ধায় কমছে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর পানি। এরমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এখনো বিপৎসীমার ৪৬ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বেড়েছে করতোয়ার পানি। তবে করতোয়ার বাড়লেও তা বিপৎসীমার ১০২ সেমি নিচে রয়েছে।

গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফিরতে শুরু করেছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা। তবে পানি কমলেও বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখনো রয়ে গেছে। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকার জেগে উঠছে নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাটসহ ঘরবাড়ির উঠান। উঠান জেগে উঠলেও কাঁদা থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। পানি কমলেও হতাশ আর দু:চিন্তায় পড়েছে বন্যা কবলিত পরিবারগুলো। কৃষিভিত্তিক যাদের জীবন-জীবিকা তারা পড়েছেন বেকায়দায়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ায় খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন পরিবারগুলো। বন্যা কবলিত মানুষের জন্য বরাদ্দ হওয়া ত্রাণও জোটেনি বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ।

জেলায় এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে ৪০ হাজরেরও বেশি পরিবারের লক্ষাধীক মানুষ। পানি কমলেও দুর্ভোগ-ভোগান্তি পিছু ছাড়ছেনা বন্যা দুর্গতদের। পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষজন শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। পানি কমার সাথে সাথে ভাঙ্গনও দেখা দিয়েছে কয়েকটি এলাকায়। লোকজন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। এবারের বন্যায় পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন ও আমন বীজতলাসহ ২ হাজার ৫০০ হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানি কমলেও ক্রমেই দুর্ভোগ-ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টায় গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায়  ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১২ সেমি হ্রাসের পরও বিপৎসীমার ৪৬ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ও ঘাঘট নদীর পানি ১৬ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৪ সেমি এবং তিস্তার নদীর পানি ২৪ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৪৩ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি ২০ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপৎসীমার ১০২ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এরআগে, গেল ৫ জুন পর্যন্ত জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সর্বোচ্চ ৮৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি সর্বোচ্চ ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ওঠায় ১৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩টি দাখিল মাদ্রাসাসহ মোট ১৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও জেলা শিক্ষা বিভাগ। চলমান বন্যায় চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, গেল চারদিন থেকে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বৃদ্ধি পেলেও করতোয়ার পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তিনি বলেন, আশা করা যায় সপ্তাহখানেকের মধ্যে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, শুকনো খাবারসহ নগদ টাকা বানভাসীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। বানভাসিদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ চিকিৎসা সামগ্রী। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় মেডিকেল, কৃষি, স্বেচ্ছাসেবক এবং লাইভস্টোক টিম কাজ করছেন।

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর