১৩ জুলাই, ২০২৪ ১৬:৪৬

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি কমলেও বাড়ছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ। এদিকে বন্যার পানিতে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।  

একদিকে কাজকর্ম নেই অন্যদিকে বানভাসিদের পুঁজি শেষ হওয়ায় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বানভাসিরা। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় অনেকে পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সরকারিভাবে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

এদিকে পানিতে ডুবেছে চরের নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি। তলিয়ে গেছে বিস্তর ফসলের ক্ষেত। চরাঞ্চলে বেশ কিছু সড়ক ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে যমুনার পানি। নদী তীর ও বাঁধের মাঝে বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় বাড়ি ঘর সরিয়ে নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে হাজারো মানুষ। এর মধ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। 

জানা যায়, বগুড়ায় যমুনার পানি বাড়তে শুরু করে গত সপ্তাহ থেকে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে যমুনা বিপদসীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরের নিচু গ্রামগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তিন উপজেলার ১ হাজার ৩৫৬ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমনের বীজতলা, সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ১১ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে পানি কমতে শুরু করলেও বন্যার্তদের বেড়েছে দুর্ভোগ। 

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। এর আগে পানি বৃদ্ধি পেলেও যমুনা তীরের ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এখনো কোনো ঝুঁকি দেখা দেয়নি। যমুনার ৬টি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে ইছামারা অংশে ভাঙন প্রবল। সেখানে নদী থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। ঝুঁকিপূর্ণ ওই এলাকা রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া সারিয়াকান্দির হাটশেরপুর, কর্ণিবাড়ি, সোনাতলার সুজাইতপুর এবং ধুনটের শহড়াবাড়ি বাঁধের ১০০০ মিটার ভাঙন ঝুঁকি রয়েছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিত সার্বক্ষণিক জানার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় কখন কি প্রয়োজন তা আমরা এ সেলের মাধ্যমে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বানভাসি মানুষদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরবর্তী মানুষের পুনর্বাসন করতে যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। একই সাথে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া ৬টি বন্যা আশ্রয়ন কেন্দ্র, ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিকেল টিমও কাজ করছে।

এদিকে সোনাতলায় ৯ হাজার পরিবারের ৩১ হাজার ৫৩২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। এ ছাড়াও উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ২০ হাজার গরু-ছাগল ও ৬৫ হাজার হাঁস-মুরগি বন্যার কবলে রয়েছে। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবুর রহমান জানান, যমুনার পানিতে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। সারিয়াকান্দিতে ৫৬০ হেক্টর এবং সোনাতলা উপজেলায় ২৬১ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এসব জমিতে পাট, ভুট্টা ও সবজি চাষ করা হয়েছিল।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আলহাজ্ব নাজমুল হক জানান, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনার পানি গতকাল শনিবার দুপুরে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি কমেছে ১৪ সেন্টিমিটার। গত কয়েক দিন পানি বৃদ্ধির কারণে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি ও চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু জায়গা ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান জানান, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর