১৩ জুলাই, ২০২৪ ১৯:০৮

কুড়িগ্রামে পানি কমলেও কমেনি দুর্ভোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামে পানি কমলেও কমেনি দুর্ভোগ

কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি কমলেও কমেনি দুর্ভোগ মানুষের। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সবকটি নদনদীর পানি কমলেও এখনও ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, বৃহ্মপুত্র নদের কড়াল গ্রাসে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক মানুষ। একদিকে বন্যা অপরদিকে নদী ভাঙন এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। বন্যার্তদের মধ্যে অনেকেই উচু স্থান থেকে এখনও বাড়িতে ফিরেননি।

ব্রহ্মপুত্র নদের হকের চরের মানুষ বন্যায় একদিন শূকনা খাবার ছাড়া আর কোন ত্রাণ তাদেও ভাগ্যে জোটেনি। হাজরা বেগম নামে এক নারী জানান, ‘হকের চরের গুচ্ছ গ্রামে সরকারি ঘরে আছলং। নদী ভাঙ্গনে সে ঘরগেইল। তোমরা একনা নেকিদেন বাহে হামাক জানি সরকার ফির ঘর দেয়। নাইলে থাকমো কোনটে।’রোকেয়ার স্বামী কৃষি শ্রমিক শাহাবুল। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ভাঙ্গা ঘরের জিনিসিপত্র নিয়ে নৌকায় উঠছেন। রোকেয়া জানান, গুজিমারীর চওে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন। ছেলে রুহুল আমিন এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন উলিপুরে একটি ছাত্রাবাসে থেকে। আর মেয়ে শারমিন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী পড়শেুনা বন্ধের উপক্রম। কারণ স্কুল অনেক দূরে যাতায়াত সমস্যা।শাহাবুদ্দিন (৭০), হাজেরা বেওয়া (৬৫) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ২০১০ সাল থেকে এই চরে থাকি। ২০১৯ সালে সরকার গুচ্ছ গ্রামে ঘর দেয়। এই ঘর সব নদী খায়া নিলো। এলা মাথাগোজার ঠাই নাই। যাচ্ছেন দক্ষিণে চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের এক চরে। তাদের দাবি সরকার যেন দ্রুততম সময়ে নতুন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেন।হাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, হকের চরটিকে ব্রক্ষপূত্র ভাঙ্গছে ইউ আকারে। গোটা চরটি পর্যায়ক্রমে নদীর পেটে যাচ্ছে। এই চরের অবস্থান হাতিয়া ইউনিয়ন, নয়ারহাট, সাহেবের আলগা ও রাণীগঞ্জের সীমানা এলাকা। এই চরে এই চার ইউনিয়নের লোক বিভিন্ন সময় নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে আশ্রয় নেয়। ফলে কোন ইউনিয়ন পরিষদ এদের খুব একটা খোজ খবর রাখে না। ফলে এরা বরাবরই অবহেলিত থাকছে। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের গুজিমারী আবাসনে গিয়ে দেখা যায় ৯০টি পরিবারের চরম দুর্ভোগের চিত্র। প্রায় ২০দিন ধরে এখানকার মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছেন।কাজ নেই, নেই হাতে টাকা। ফলে চলছে মানবেতর জীবন যাপন। এর পরেও এই চরে এখন পর্যন্ত পৌছেনি সরকারি কোন ত্রাণ সহায়তা। এমন অভিযোগ করেন ফুল মিয়া (৬৫), দুলু (৬০), মুকুল (৫৭), সাহেরবানু বেওয়া (৭০), রহিমা বেওয়া (৬৫) সহ অনেকে। 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডেও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি বলেন, একই সঙ্গে পানি কমার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন।জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, জেলার ৯ উপজেলা ৫৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৬৬২ দশমিক ৭৫ বর্গ কি: মিটার। বন্যা আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১০০টি। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ৪৫৮টি পরিবার। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির। বন্যার্তদের সেবায় ৮৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। জেলার ৯ উপজেলায় ১৩০০ মে. টন চাল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেয়া হয়েছে শূকনা খাবার বরাদ্দ। এখন পর্যন্ত ৫৮৭ মে.টন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং ২৪ হাজার ৩৬০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।  

বিডি প্রতিদিন/এএম

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর