১৮ জুলাই, ২০২৪ ১৯:০৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাগ্নে-ভাগ্নিকে গলা কেটে হত্যা, মামার মৃত্যুদণ্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাগ্নে-ভাগ্নিকে গলা কেটে হত্যা, মামার মৃত্যুদণ্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ভগ্নিপতির সঙ্গে টাকা লেনদেনের ক্ষোভে স্কুল পড়ুয়া ভাগ্নে-ভাগ্নিকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় মামা বাদল মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. আব্দুল হান্নান এ রায় ঘোষণা করেন। 

রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাদল মিয়া কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খুদাদাউদপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে। হত্যার শিকার শিফা আক্তার (১৪) ও তার ছোট ভাই মেহেদি হাসান কামরুল (১০) বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের কামাল হোসেনের সন্তান। 

মামলার বিবরণে বাদী কামাল হোসেন উল্লেখ করেন, বাদল বাহরাইনে থাকাকালে দোকানঘর করতে কামালের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেয়। এর মধ্যে তিন লাখ টাকা ফেরত দেয়। বাকি ১০ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ায় কামালের সঙ্গে তার মনোমালিন্য চলছিল। ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে বাদলকে এজন্য থাপ্পড়ও মারেন কামাল। সেই ক্ষোভে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা থেকে বাদল লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

মামলায় বলা হয়, ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সময় লকডাউন ঘোষণার আগে বাদল দেশে এসে নিজ গ্রামের একটি ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি হয় এবং হত্যাকাণ্ডের অন্তত দুই মাস আগে থেকে বাঞ্চারামপুরের সাহেবনগর গ্রামে ভগ্নিপতি কামালের বাড়িতে অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় ওই বছরের ২৪ আগস্ট সোমবার দুপুরে ভগ্নিপতির বাড়িতে তার থাকার কক্ষে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে ভাগ্নে মেহেদী হাসান কামরুলের হাত-পা বেঁধে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে তার লাশ খাটের নিচে রেখে দেয়। এ সময় ভাগ্নি শিফা ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে তা দেখে ফেলায় তাকেও মারতে উদ্যত হয় সে। জোড়াজোড়ির এক পর্যায়ে শিফাকে ধাক্কা মেরে বাথরুমে ফেলে গলা কেটে হত্যা করে তার লাশও খাটের নিচে রেখে দেয়। 

এদিকে, সন্ধ্যা হওয়ার পরও দু’জনকে খুঁজে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং রাতে থানায় খবর দেওয়া হয়। এরই মধ্যে কামাল উদ্দিন তার শ্যালক বাদল মিয়াকে নিয়ে বাচ্চাদের খোঁজে বাঞ্ছারামপুর ফেরীঘাট এলাকায় গেলে বাদল মিয়া কাউকে কিছু না বলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি পুলিশের সন্দেহ হলে ২৬ আগস্ট ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে এ ঘটনায় হত্যা মামলার দায়ের হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বাদল।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা বাঞ্ছারামপুর থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু আহমেদ ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম বলেন, মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজু আহমেদ আসামি বাদলকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দের পর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে কর্মরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন সাক্ষীদেরকে যথাযথভাবে উপস্থাপনের কারণে বিজ্ঞ আদালত দ্রুত এই মামলার রায় দিতে সক্ষম হয়েছেন।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর