শিরোনাম
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১৭:৫৮

ভরা মৌসুমেও চাঁদপুরে ইলিশের দেখা নেই

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর :

ভরা মৌসুমেও চাঁদপুরে ইলিশের দেখা নেই

ভরা মৌসুমেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের দেখা মিলছে না। দিন-রাত নদীতে জাল ফেলেও মাছ না পেয়ে হতাশ জেলেরা। জাল ফেলে তারা যে পরিমাণ মাছ পাচ্ছে, তাতে লাভ দূরে থাক, নৌকার জ্বালানি তেলের খরচই উঠে আসছে না। গত মার্চ-এপ্রিল দু’মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শেষে মহাজনের দাদনের টাকা কাঁধে নিয়ে ১ মে থেকে জেলেরা নদীতে নামে। মৌসুম শুরু হলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এতে জেলার অর্ধ-লক্ষাধিক জেলে আর্থিক সংকটে পড়েছে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, শীঘ্রই জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়বে। 

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, হাঁক-ডাক দিয়ে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। জেলে জামাল দেওয়ান ও মালেক বেপারী বলেন, বুক ভরা আশা নিয়ে নদীতে নেমেছি কিন্তু নদীতে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছি। ভরা মৌসুম শুরু হলেও চাঁদপুরে নদীগুলো ইলিশ শূন্য। পদ্মা-মেঘনায় দিন-রাত জাল ফেলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশের নাগাল পাচ্ছি না। অধিকাংশ সময়ই একপ্রকার শূন্য হাতে জাল-নৌকা নিয়ে ফিরে আসতে হয়। জালে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে, তাতে নৌকার তেলের খরচও উঠে আসছে না। 

ক্রেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, ভরা মৌসুমে ইলিশের সংকট ও দাম অসহনীয় থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেন। বাজারে এসে দেখছি ইলিশের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মাছ না কিনেই বাড়ি ফিরছি, দাম কমলে তখন কিনবো। এখন ৫শ’ থেকে ৭শ’ গ্রাম সাইজের ইলিশ ১২শ’ টাকা টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুর ইলিশের বাড়ি হলেও আমরা  ইলিশের নাগাল পাচ্ছি না। 

আড়তদার দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় আড়ৎগুলো মাছ শূন্য। ভরা মৌসুমে আড়তে ইলিশ না আসায় আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। অন্যান্য বছর এই সময়ে স্থানীয় নদীর ও বরিশাল থেকে অনেক মাছ আসতো। তখন ভাত খাওয়ার সময় পর্যন্ত পেতাম না। এবার আড়তে মাছ না থাকায় আমরা অলস সময় পার করছি। বর্তমানে এক কেজি সাইজের ইলিশ ১৭শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা। ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রামের ইলিশ ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা এবং ৫শ’ থেকে ৭শ’ গ্রামের ইলিশ ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে গড়ে একশ’ থেকে দেড়শ’ মন ইলিশ আমদানি হয়েছে। অথচ গত বছর এসময়ে দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার মন ইলিশের আমদানি হয়েছিল। 

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিক বলেন, চলমান পরিস্থিতি ও কারফিউর কারণে গত কয়েকদিন ইলিশের আমদানি হলেও দেশের পরিবহন সংকটে অন্যন্য জেলাগুলোতে ইলিশ পাঠানো সম্ভব হয়নি এবং ব্যবসায়ীরাও আসতে পারেনি। কারফিউর কারণে অনেক পরিবহন মালিক তাদের গাড়ি চালাতে নারাজ। এখন প্রতিদিন স্থানীয় পদ্মা-মেঘনাসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ট্রাকে করে গড়ে এক থেকে দেড়শ’ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে ইলিশ উৎপাদন কিভাবে বাড়ানো যায়।  তবে কারফিউ'র কারণে গত কয়েকদিন মাছঘাটে আসা ইলিশ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে ব্যবসায়ীরা পরিবহন সংকটে পড়েছেন। 

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বছর জুড়েই জেলেরা ইলিশ পেয়ে থাকে। এখন পুরো ভরা মৌসুম হলেও সামনে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়ী ও জেলেদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সামনে যতদিন আসবে ততই ইলিশের আমদানি বাড়বে।

বিডি-প্রতিদিন/শআ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর