৯ আগস্ট, ২০২৪ ১৬:৩৫

দখল করেছিলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান, এবার হলো উদ্ধার

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

দখল করেছিলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান, এবার হলো উদ্ধার

ঘুষ-দুর্নীতিতে আলোচিত ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রভাব খাটিয়ে দখল করেছিলেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জমি। রাতারাতি তৈরি করেছিলেন মার্কেট। তবে শেষ রক্ষা হলো না। জমিটির আসল মালিকপক্ষ মার্কেটটি গুঁড়িয়ে দিয়ে জমিটি উদ্ধার করেছেন।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম নাসির উদ্দিন আহমেদ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক মিয়া। তারই ১৫ শতাংশ জমি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ২০১৭ সালে দখল করে রেখেছিলেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

শুক্রবার সকালে জমির প্রকৃত মালিক আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার উত্তরসূরিরা ভেক্যু মেশিন দিয়ে মার্কেট গুঁড়িয়ে দিয়ে জমিটি উদ্ধার করেন। এসময় তাদের সহায়তা করেন স্থানীয়রা। আছাদুজ্জামানের দখলমুক্ত হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আছাদের বিচার দাবি করেন।

স্থানীয়রা জানান, আছাদুজ্জামান যখন ডিএমপি কমিশনার ছিলেন তখন থেকেই তার গ্রামের এলাকায় বিভিন্ন মানুষের জমি দখল শুরু করেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেত না। বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক মিয়ার জমিটির পাশে আছাজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামান আল্পনার নামে জমি রয়েছে। সেই সুবাদে আছাদের দৃষ্টি পড়ে রাজ্জাকের ১৫ শতাংশ জমির ওপর। একপর্যায়ে রাতারাতি জমিটি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে নেয় আছাদ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক মিয়ার ছোট ছেলে মো. রেজওয়ান জানান, ক্রয়সূত্রে তারা ১৫ শতাংশ জমি কেনেন, যা ১৯৯৭ সাল থেকেই তারা ভোগদখল করছিলেন। তবে সেই জমি দখলে নিতে মিথ্যা মামলা দেয় আছাদের স্ত্রী আল্পনা। ২০১০ সালে আদালতের রায় আসে তাদের পক্ষে। এরপর থেকে জমিটি অবৈধ দখল নিতে প্রভাব খাটাতে শুরু করেন আছাদুজ্জামান।

রেজওয়ান বলেন, ‘পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আছাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপি কমিশনার হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের জমিটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি নানা ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের পুলিশি হয়রানি করে। আজ সাত বছর পর স্থানীয়দের সহায়তায় আছাদের অবৈধ দখল থেকে জমিটি আমরা উদ্ধার করেছি।’

গোপালপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এই আছাদুজ্জামান এলাকায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনেক অপকর্ম করেছে। এতদিন ভয়ে চুপ থাকলেও এখন একে একে সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে। এখন আছাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সোচ্চার।

সম্প্রতি আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে দেশের প্রায়সব গণমাধ্যমে খবর আসে। গত জুনে দুদকে অভিযোগও জমা পড়ে। তবে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি রহস্যজনক কারণে দুর্নীতির নথিপত্র পেয়েও আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেনি। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর আছাদুজ্জামান মিয়াকে এলাকার মানুষ প্রকাশ্যে দেখেনি। ঢাকার নিকুঞ্জে নাবালক ছেলের নামে গড়া শতকোটি টাকা দামের বাড়িতে ছিলেন বলে জানা যায়। তবে ছাত্র আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক দফা দাবি ওঠার পর আছাদ সপরিবারে আত্মগোপনে চলে যান।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দুর্নীতিবাজ আছাদুজ্জামানের নিকুঞ্জের বাড়িতে হামলা চালান বলে জানা যায়। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর