১৬ আগস্ট, ২০২৪ ১৫:১৭

চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট না থাকায় বগুড়ায় কমছে নিত্যপণ্যের দাম

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া:

চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট না থাকায় বগুড়ায় কমছে নিত্যপণ্যের দাম

বগুড়ায় ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি-সিন্ডিকেট না থাকায় কমছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই বাজার থেকে উধাও সিন্ডিকেট। দিতে হচ্ছে না পরিবহন চাঁদা। এতে করে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এদিকে কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে পারছেন। ফলে ন্যায্য মুল্যও পাচ্ছেন তারা। বাজারে প্রতিটি সবজির দাম কেজি প্রতি কমেছে ৫ থেকে ৭টাকা। 

জানা যায়, বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, কলোনী ও খান্দার বাজারসহ খুচরা বাজারে ছাত্ররা তদারকি শুরু করায় সবজিসহ নিত্য পণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে।  উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ সবজি হাট মহাস্থান গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক সরাসরি নির্ধারিত দরে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। আগে হাটে সিন্ডিকেট দালাল চক্র কম দামে তাদের সবজি বিক্রি করতে বাধ্য করতো। এখন আর সে চিত্র নেই। সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে ভোক্তা কিনতে পারার কারনে প্রতিটি সবজিই ৫থেকে ৭ টাকা কেজিতে কম কিনতে পারছেন। এছাড়া স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে এই অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহ বেড়ে গেছে। 

সাধারণ ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সরবরাহ কমে যাওয়ার প্রভাবে যেসব সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল, তা আবারো কমতে শুরু করেছে। এখন পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট নেই। পরিবহনে চাঁদাবাজিও নেই। ফলে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। তারা বলেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী ছিল। এখন সেটা ভেঙে পড়ায় আগের চেয়ে দাম অনেকটা কমে আসতে শুরু করেছে। তারা আরো জানান, সরকারি দলের ছত্র ছায়ায় এই সিন্ডিকেট সারাদেশের মত বগুড়াতেও শক্তিশালী ছিল। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। 

শুক্রবার বগুড়ার বিভিন্ন বাজারে আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫টাকা। যা আগে ছিল ৭০টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি, বেগুন ৮০ টাকা কেজি, পটল ৬০টাকা, ঢ়েঁরস ৬০ টাকা কেজি, শসা ৬০টাকা, বই কচু ৮০টাকা, করলা ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘাটে ঘাটে চাঁদা ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি সবজির উপর ৫ থেকে ৭টাকা দর কমেছে। 
এদিকে বগুড়ার বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি বিআর-২৮ চাল মানভেদে ৫৪-৫৮, রঞ্জিত ৫৬-৫৮, কাটারিভোগ ৬৬-৬৮ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৮-৭০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চাল প্রতিকেজি ৮০ টাকা আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা যায়। 
বগুড়া সদর উপজেলার পল্লীমঙ্গল এলাকার কৃষক আমিনুর ইসলাম জানান, তিনি ১০ শতাংশ জমিতে পটলের আবাদ করেছেন। ২ দিন পরপর ৬০ কেজি করে ফলন তোলেন। এগুলোতে জমিতেই ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তারপরেও তার লাভ থাকছে। কারনে কোন অতিরিক্ত টাকা তাকে দিতে হচ্ছে না। 
বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার শাহবন্দেগী গ্রামের পাইকারি চাল ব্যবসায়ি আইয়ুব আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গত দুইদিনে বাড়েনি চালের দাম। এখানে মিলরেটে মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা, কাটারি ৬৫/৭০ টাকা, আটাশ চাল ৫০ টাকা, মোটা চাল ৪৪/৪৬ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন এভাবে চললে ক্রেতারা ন্যায্য মূল্যেই চাল কিনতে পারবে।

এদিকে চাঁদাবাজি বন্ধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ঠেকাতে বাজার মনিটরিং করেছেন শিক্ষার্থীরা। বাজারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিল ও মাইকিং করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরও বাজার তদারকি করছেন। 

বগুড়া ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিবিধ ব্যয় কমেছে এবং পণ্যের মজুত স্বাভাবিক রয়েছে। এরফলে পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আসবে। তিনি শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক বাজার মনিটরিং কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান। 

বিডি প্রতিদিন/এএম

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর