‘আজ চারদিন ধরে ভাত খাইনা, মুড়ি ও শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। ঘরের খাবার শেষ হয়ে গেছে কয়েকদিন আগেই। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটা মুদি দোকান থেকে চিড়া-মুড়ি নিয়ে এসেছিলাম। আপনারা যেন দেবদূত হয়ে এলেন। আজকে পেটভরে ভাত খাব’-এভাবেই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নিজের অনুভূতি জানাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব বছরের বৃদ্ধ আবেদ আলী।
বন্যাকবলিত নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৫ নম্বর শরীফপুর ইউনিয়নের চিত্র অনেকটাই এরকম।
শনিবার শরীফপুর ও আশপাশের এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করে ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের সংগঠন ব্যাচ ৯৭, নারায়ণগঞ্জ।ব্যাচ ৯৭’র ত্রাণসামগ্রী পেয়ে আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বৃদ্ধ আবেদ আলী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, দুর্গম বলে এ অঞ্চলে কেউ ত্রাণ নিয়ে আসেনি। মহাসড়ক ও আশপাশ এলাকায় দিয়েই চলে গেছে অনেকে। ঝুঁকির কারণে কেউ এতদূর পর্যন্ত আসে না।
শুধু আবেদ আলী-ই নন, ত্রাণসামগ্রী পেয়ে সকলেই আনন্দিত।
৪০০ পরিবারের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে শুক্রবার সকালে ব্যাচ ৯৭, নারায়ণগঞ্জ কমিটির একটি টিম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৫ নম্বর শরীফপুর ইউনিয়নে পৌঁছায়। পরে তারা স্থানীয়দের সহায়তায় কোথাও কোথাও নৌকা, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি মাড়িয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন ত্রাণসামগ্রী।
টিমের অন্যতম সদস্য হালিম উল্লাহ জানান, ত্রাণসামগ্রীর প্রতিটি প্যাকেটের মধ্যে ছিল-৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, এক লিটার সয়াবিন তেল, আধা কেজি পিঁয়াজ, আধা কেজি টোস্ট বিস্কুট, ৫ প্যাকেট স্যালাইন, এক পাতা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, একপাতা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, ৬টি মোমবাতি ও একটি গ্যাস লাইটার।
সংগঠনটি সভাপতি ডা. ফরহাদ আহমেদ জেনিথ জানান, প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ওইসব ত্রাণসামগ্রী ছাড়াও ফেনী, লাঙ্গলকোট ও মাইজদীতে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ ৮০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মানবিক কারণেই আমরা ত্রাণ বলছি না, এটা ব্যাচ ৯৭-এর পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য উপহার।
ফরহাদ আরও জানান, নারায়ণগঞ্জের প্রায় সবগুলো স্কুলের ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ব্যাচ ৯৭, নারায়ণগঞ্জ। বন্যা তহবিলে প্রায় সবগুলো স্কুলের সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চাঁদা দিয়ে অংশগ্রহণ করেছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই