২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২১:০৯

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা

বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে লক্ষ্মীপুরের তুলনামূলক উঁচু এলাকা থেকে। আর তাতেই ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে প্রত্যন্ত জনপদে। বিশেষ করে নদী-খালের পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষ পড়েছেন বেশি বিপাকে। জেলাজুড়ে এরইমধ্যে ১৮ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপর্যস্ত পরিবারের চাওয়া এখন কার্যকর সহায়তা।  

মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পিয়ারাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন ৮-১০টি পরিবার। স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে দুপুরের খাবার মিলেছে সবার। সবাই মিলে বাড়ীর উঠানে (ভাঙ্গা অংশে) ভাগাভাগি করে খেয়েছেন তা। এসময় দেখা গেছে শেষ সম্বল হারানোর ক্ষত চোখের জল হয়ে নেমেছে রোকেয়া আক্তার নামের এক নারীর। ঋণের টাকা দিয়ে করা  তার ঘর ভেঙেছে বানের জলে। খালের স্রোতে পাল্লা দিয়ে বিলীন হচ্ছে ভিটেমাটি। শুন্য ভিটেতে বসে তাই ভবিষ্যত সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা এ নারীর।  
জানতে চাইলে কান্না জড়িত কন্ঠে রোকেয়া বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে আর কিছু বাকি নেই। ভিটে মাটি কিছুই নেই, পায়ের তলের মাটিও নেই, থাকবো কই খাবো কি সব নিয়ে গেছে বন্যায়, স্বামী বাক প্রতিবন্ধী( বোবা) বদলা কামলা দিত, এখন আর তাও পারেনা, খূঁজি বিচারি (ভিক্ষা)খাওয়ার উপায়ও নেই, সরকার যদি কিছু সহায়তা করে তাহলে বাঁচতে পারুম (পারবো)।
তার পাশেই প্রতিবেশী মাহিনুর বেগমের ঘর। বানের জল থেকে রক্ষা পাওয়া আসবাবপত্র নিয়ে অন্যত্র যাত্রা করছেন তিনি। ক্র্যাচে ভর করে মাহিনুরের স্বামীও সেই পথ ধরেছেন।  প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে মাহিনুরের জীবনযুদ্ধ কঠিন করেছে এবারের বন্যা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাদের প্রত্যাশা, সহায়তার।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদরের ওয়াপদা খালের পাশের এমন অনেক পরিবার এখন ভাসমান। আশ্রয় নিয়েছেন কিছুটা উঁচু জায়গায়। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এরইমধ্যে জেলাজুড়ে ১৮ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দূর্যোগ কবলিত জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ জন, আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ৩২ হাজার ৫১৯জন। ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এমন পরিস্থিতি বন্যা আরো কয়েকদিন থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যার জলে বিধ্বস্ত অবশিষ্টাংশ নিয়ে নতুন ঘর বাধার চেষ্টা করছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। কিছুদিন বাদে সংগ্রামী এসব মানুষ হয়তো অন্য কোথাও স্থায়ী হবেন। কিন্তু হৃদয়ে যে তীব্র ক্ষত, তা কতোদিনে শুকাবে তা জানেনা কেউ।

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর