২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৯:৫২

বাবা-মার সমাধির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত তোফাজ্জল

বরগুনা প্রতিনিধি

বাবা-মার সমাধির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত তোফাজ্জল

জানাজা শেষে বাবা-মা ও ভাইয়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের হাতে নির্মম নির্যাতনে নিহত মাসুদ কামাল তোফাজ্জল। জানাজা শেষে তোফাজ্জলের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয়রা। এ সময় শোকে কাতর এলাকাবাসী হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

শুক্রবার সকালে পাথরঘাটার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদোয়ানী গ্রামে জানাজা নামাজের পর স্থানীয় গ্রামবাসীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে।

এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টায় বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের একটি মাদ্রাসা মাঠে তোফাজ্জলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন। পরে কাঁঠালতলীর তালুকের চরদোয়ানী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মোবাইল চোর সন্দেহে প্রথমে তাকে এক দফা পেটানো হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে ভাত খাওয়ানো হয় এবং দ্বিতীয় দফায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধর করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানা যায়, তোফাজ্জল উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। প্রেম-সংক্রান্ত বিষয়ে মানসিক আঘাত পেয়ে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান। এরপর তার জীবনে একের পর এক বিপর্যয় নেমে আসে। প্রথমে ২০১৫ সালে তার বাবা, পরে ২০১৯ সালে তার মা এবং ২০২৩ সালে একমাত্র বড় ভাইয়ের মৃত্যু ঘটে। এত শোক সহ্য করতে না পেরে তোফাজ্জল পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারান এবং গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াতেন।

মানববন্ধনে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বক্তারা বলেন, তোফাজ্জল খুবই হাস্যরসিক ও সদালাপী ছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও তিনি সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলতেন। এমন নৃশংস ঘটনা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ঘটবে, তা কল্পনাও করা যায় না। চুরির অভিযোগ থাকলে দেশে আইন রয়েছে, সামান্য কয়েক টাকার মোবাইলের জন্য তোফাজ্জলকে হত্যা করা হলো। বক্তারা আরও বলেন, হত্যার আগে তোফাজ্জলের পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। আমরা তোফাজ্জলের হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

উল্লেখ্য, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সারা দেশে আলোড়ন তুলেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ তোফাজ্জল হত্যার সাথে জড়িত ৬ জনকে আটক করেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর