শিরোনাম
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:২৫

১০ বছর ধরে সন্তান গুম, রাসেলের শেষ খবর জানতে চায় পরিবার

শেরপুর প্রতিনিধি

১০ বছর ধরে সন্তান গুম, রাসেলের শেষ খবর জানতে চায় পরিবার

টগবগে যুবক ছাত্রদল নেতা মাজহারুল ইসলাম রাসেল ১০ বছর আগে গুম হয়ে গেছে। খবর নিতে গেলে একদল সাংবাদিক দেখেই দৌড়ে এসে হাউমাউ করে চিৎকারে মায়ের একটাই জিজ্ঞাসা, আমার রাসেলের কোন খবর আছে?মায়ের এই কান্নায় আবেগ আপ্লুত হয়েছে সাংবাদিক ছাড়াও উপস্থিত অনেক মানুষ।

মা মজিদা বেগম ছেলের বিছানা দেখিয়ে বললেন, এই বিছানায় ঘুমাত আমার রাসেল। ছেলের বিছানা প্রতিদিন পরিষ্কার করি। ১০ বছর ছেলের বিছানায় কাউকে শুইতে দেই নাই। এখন মায়ের একটাই চাওয়া হয় ছেলেকে সরকার ফেরৎ দিক, না হয় আদরের মানিকের সাথে কি হয়েছে জানতে চাই। এলাকাবাসি বলেছে, ছেলের অপেক্ষায় মা-বাবা পাগল হতে বসেছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ নষ্ট হওয়ার পথে। এই দশ বছরে রাসেলের মাকে কেউ হাসতে দেখেনি। রান্না হয়নি ভাল খাবার। শুধু রাস্তার দিকে চেয়ে থাকে ছেলে কখন আসবে। ছেলে আর নেই এমন কথা কেউ বললে তার সাথে কথা বলে না রাসেলের মা। ছেলেকে হত্যা যদি করা হয়ে থাকে ওই হত্যাকারীর একবার মুখোমুখি হতে চান রাসেলের মা-বাবা।

রাসেলের পরিবার ও এলাকাবাসি সূত্রে গেছে, শেরপুরের নকলা উপজেলার নিভৃত পল্লী ধুদুুরিয়ার গ্রামের ব্যবসায়ী মো. আমিনুল ইসলামের তিন সন্তানের মধ্যে মেঝ ছেলে রাসেল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল সে।রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় মেধা তালিকায় তৃতীয় হয়েছিলেন। এলাকায় ও বিশ্বদ্যিালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তবে জ্ঞান ভিত্তিক রাজনীতি তার পছন্দ ছিল। ২০১৩ সালে মাস্টার্স শেষ করার পর পড়শোনা শুরু করে আইন বিভাগে। ৩৪তম বিসিএস এ প্রথমবারের মতো পরীক্ষা দিয়েই এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় রাসেল। ব্যাপকভাবে ভাইবার জন্য প্রস্ততি নিতে থাকে রাসেল। তবে দেশ-বিদেশে বিএনপি মনোভাবাপন্নদের সাথে যোগাযোগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মিছিল-মিটিংয়ে সে সরব ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলো রাসেল। তার ছোট বোনকে সাথে নিয়ে ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের এক মাস আগে ভাটারা এলাকার একটি বিল্ডিং এর নিচে থেকে রাসেল ও তার চার বন্ধুকেসহ মোট ছয় জনকে কালো গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন রাত আটটার মত হবে।

সেদিন উঠিয়ে নিয়ে যাওয়াদের মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত ফিরে আসেনি, দাবি করে রাসেলের ছোট বোন নুসরাত জাহান লাবনী বলেছেন, ভাইয়ের খোঁজ না পেলেও ঘটনার দুই দিন পর ঘটনাস্থলের ঠিকানা পেয়ে ছিলাম। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, র‌্যাব-১ লেখা দুটি কালো গাড়িতে ওদের তুলে নিতে তারা দেখেছেন। সাথে সাদা আরও দুটি গাড়ি ছিল। তারপর বাবাকে নিয়ে র‌্যাব-১ এ গেছি, তারপর আরও উপরের কর্মকর্তাদের কাছে গেছি। কত হাতে পায়ে ধরেছি ভাইকে ফেরৎ পেতে, পাষানের মন গলেনি। তৎকালীন প্রকাশিত নানা গণমাধ্যমের কাছে র‌্যাব রাসেলকে তুলে নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। পরবর্তীতে থানায় জিডি করার সময় জিডিতে র‌্যাবের নাম লেখার কারণে পুলিশ জিডি নেয়নি। পরবর্তীতে নিখোঁজ হিসেবে আমরা থানায় জিডি করতে বাধ্য হই। ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়।  

এ বিষয়ে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিয়েছেন রাসেলের বাবা আমিনুল ইসলাম ডিলার। তিনি  বলেছেন, র‌্যাব-১ তখন বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও অস্বীকারও করেনি। তারা আমাদেরকে বলেছে, নির্বাচনের পরে রাসেলকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আশ্বস্থ করেছিলেন। ছেলেকে পেতে আমরা র‌্যাবের দপ্তরে দিনের পর দিন যেতাম। র‌্যাব আমাদের সাথে কথা বলতো, কখনো বিরক্ত হতো। এর মধ্যে তৎকালীন র‌্যাবের ডিজি মোখলেছুর রহমানের সাথে কথা বলতে বলা হয়। তখন আমরা বুঝতে পারি ডিজি বললেই ছেলেকে ফিরে পাব। এরমধ্যে বাড়াবাড়ি না করতে বেশ কিছু প্রাইভেট নাম্বার থেকে আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হতো। ডিজির কাছে গিয়ে ছিলাম ডিজি না করেছেন। র‌্যাবের গোপন সূত্রে জানতে পারি, তৎকালীন র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স টিমের দায়িত্বরত জিয়াউল আহসানের কাছে সব জানা যাবে। ছেলের খোঁজ পেতে আমি জিয়াউল আহসানের দুই পা জড়িয়ে ধরে কান্না করেছি। জিয়াউর আহসান ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মুখে বুট জুতা দিয়ে লাথি মেরেছে। 

এলাকার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও নকলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মাহমুদুল হক দুলাল বলেন, রাসেল দলের মার্জিত ও জ্ঞানী একজন ছেলে ছিল। দলের উচ্চ পর্যায়ে তার যোগাযোগ ছিল। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু রাসেলের ভাগ্যে কি ঘটেছে আমার সবাই জানতে চাই।
শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেছেন, পূর্বে যেখানে জিডি করা হয়েছে, সেখান থেকেই তদন্ত শুরু হবে। শেরপুর পুলিশ সুপার হিসেবে আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা আমি পালন করবো।   

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর