মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমছে। গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে না, ফলে শেরপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।
পানিবন্দি না থাকলেও কেউ কেউ সড়কে জানমাল নিয়ে থাকছেন। আবার বাসাবাড়িতে পানি কমলেও কেউ কেউ কোনো রকম বাড়িতেই থাকছেন।অন্যান্য উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হলেও নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির হার অপেক্ষাকৃত কম। ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়ার মত তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্য সংকট রয়েছে।
এদিকে রবিবার রাতে বন্যার পানিতে ডুবে নকলা উপজেলার গণপদ্দি ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক (৫০) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ জনে।জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, রবিবার দুপুরের পর থেকে শেরপুরে বৃষ্টি হয়নি। এছাড়া মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমেছে। এর ফলে সোমবার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ওই সব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম থেকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চলে নেমে যাচ্ছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীসহ জেলায় প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আমন আবাদ, ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি ও ২ হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে ২ লাখ কৃষক। দুর্গত এলাকাতে বানের পানিতে জাল ও বর্শি দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ার মত।
এদিকে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেহাল গ্রামীণ সড়কের চিত্রসহ নানা ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝিনাইগাতী-ফাকরাবাদ সড়কের বিভিন্ন অংশ ঢলের পানিতে ভেঙে যাওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাহিদুল হক বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখনো দুর্গম এলাকায় মানুষের খাদ্যসংকট আছে। তবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যহত থাকার পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
পাউবো শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকীবুজ্জামান বলেন, নদ-নদীর পানি ধীরে ধীরে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান সোমবার বিকেলে বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত সব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কাজে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সার্বিক তৎপরতা চালাচ্ছেন ও সহযোগিতা করছেন। পুলিশ, রাজনৈতিক দল, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে এ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাদের পুনর্বাসনসহ নানাভাবে সহায়তার জন্য ত্রাণ মন্ত্রাণালয়ে বরাদ্দ চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া বন্যা পরবর্তী স্বাস্থ্য ঝুকি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কাজে নেমেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল