দেশের প্রায় পৌনে দুইশো বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়া। এক সময় সাজানো গোছানো ছিল এই শহর। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দিনে দিনে জনসংখ্যা আর যানবাহন বেড়ে এখন যান্ত্রিক শহরে পরিণত হয়েছে। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো জায়গা নেই। লেখাপড়া চর্চার জন্য নেই ভালোমানের লাইব্রেরি। শিশুদের জন্য চিত্ত-বিনোদনের নেই চিড়িয়াখানাসহ বিনোদন কেন্দ্র। যে কারণে যান্ত্রিক এই শহরের দিনের পর দিন বেড়েই চলছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। সড়কের ধারে ভ্রাম্যমাণ দোকানে ফাস্টফুডের খাবার খেয়ে মেধা বিকাশের পরিবর্তে বাড়ছে স্থুলতা ও অলসতা।
বগুড়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শহরে ভালোমানের লাইব্রেরি, চিড়িয়াখানা ও চিত্তবিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা না হলে আগামী প্রজন্মরা বিপথে চলে যাবে।
জানা গেছে, বগুড়া পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন ও বিমানবন্দর স্থাপন সময়ের দাবি হলেও এই শহরে নেই পড়াশোর জন্য ভালো লাইব্রেরি। এছাড়া শিশু-কিশোরদের চিত্ত-বিনোদন, মেধা ও মনন বিকাশে ভালোমানের লাইব্রেরি না থাকায় বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। অধিকাংশ কিশোররা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এতে করে তাদের অভিভাবকতরা দুশ্চিন্তায় পড়ছেন।
এদিকে বগুড়া শহরে পৌরপার্কে উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থগার থাকলেও সেটিতে মনোযোগী হচ্ছে না কিশোর-কিশোরীরা। অন্যদিকে বগুড়ায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র নামে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পাঠকরা কবিতা ও সাহিত্য চর্চা করতেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দেশের বৃহতম পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও বগুড়া শহরে সমস্যার শেষ নেই। এক সময়ের নিরিবিলি শহর রূপ নিয়েছে যানজটের শহরে। আর বিনোদন কেন্দ্র বলতে তেমন কিছু নেই। নেই চিড়িয়াখানা ও চিত্ত-বিনোদন কেন্দ্রসহ লাইব্রেরি। বন্ধ হয়ে গেছে কারুপল্লী। নেই ভালোমানের সিনেমা হল। যেসব সিনেমা হল ছিল সেগুলোও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া না লাগাই বন্ধ হয়ে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আর গড়ে উঠেনি সিনেমা হলগুলো। এছাড়া পড়াশোর মতো ভালো লাইব্রেরি আর বিনোদনের জায়গা না থাকায় অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। ধীরে ধীরে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাদকসেবনসহ নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে তারা।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনুভা তাসকিন মুনতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, একটি ভালো লাইব্রেরি ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা ও মনন বিকাশে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। অথচ বগুড়ায় তেমন কোন লাইব্রেরি না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা অবসরে কিংবা ছুটির দিনে বই পাঠের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা-মনন ও জ্ঞানের বিকাশে ভালোমানের লাইব্রেরি খুবই প্রয়োজন।
বগুড়া উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থগার সূত্রে জানা যায়, উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থাগার বগুড়ার একটি সমৃদ্ধ জ্ঞান ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০০৪ সাল থেকে নতুন চারতলা ভবনে এটি পরিচালিত হয়ে আসছে। গণমানুষের সংস্কৃতি চর্চা, মেধা-মনন ও জ্ঞানের বিকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে অনেক সুনামধন্য এবং বাংলাদেশের চারটি প্রাচীনতম গ্রন্থাগারের একটি উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থগার। বগুড়া শহরের প্রাণ কেন্দ্র পৌর অ্যাডওয়ার্ড পার্কের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে ঐতিহাসিক এ গণগ্রন্থাগার অবস্থিত। ঐতিহ্যবাহী এই লাইব্রেরিতে অনেক জ্ঞানীগুনী ও কবি সাহিত্যিকদের পদচারণা রয়েছে। নতুন ও পুরান মিলে এ গণগ্রন্থাগারের পুস্তক সংখ্যা বর্তমানে ৫৮ হাজার। শনিবার হতে বুধবার পর্যন্ত সপ্তাহে মোট ৫ দিন সকাল ৯টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হালিমুর রশিদ জানান, চিত্তবিনোদন ও ভালোমানের লাইব্রেরি দুটোই শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশ করে থাকে। এসব থেকে ফাস্টফুড দোকানে গিয়ে বিনোদনের পরিবর্তে বাড়ছে স্থুলতা ও অলসতা। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। এসব রোগ থেকে শিশু-কিশোরদের মুক্তি পেতে অবশ্যই ভালোমানের লাইব্রেরি ও চিত্তবিনোদন প্রয়োজন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত