৮ নভেম্বর, ২০১৯ ১৯:১৩

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে পটুয়াখালীতে বৈরী আবহাওয়া, সাগর উত্তাল

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে পটুয়াখালীতে বৈরী আবহাওয়া, সাগর উত্তাল

শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এর প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন দক্ষিন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় জেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের দরবার হলে দূর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়ে জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। 

পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ জেলার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থগিত রেখে শ্রমিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে গোটা উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। 'বুলবুল' আসছে এমন খবরের পর সারাদিন আকাশ মেঘলা ও বৃষ্টি হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

পায়রা সমুদ্র বন্দর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবৎ থাকায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে মাছ ধরারত সকল ট্রলার উপকূলে নিরাপদে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এসময় ঢেউয়ের তোড়ে কুয়াকাটার ঝাউবাগান সংলগ্ন এলাকায় এফবি কুলসুম নামের মাছ ধরা ট্রলার থেকে পড়ে জেলে বেল্লাল হোসেন (৪০) নামে এক জেলে নিখোঁজ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। অভ্যন্তরীন রুটে ৬৫ ফুটের চেয়ে ছোট সকল নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। জেলা-উপজেলায় ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য বিভাগের সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ও দায়িত্বশীণ কর্মকর্তাও ছুটি বাতিল করা হয়েছে। 

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী সভার মাধ্যমে জানান, জেলায় মোট ৪০৩ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সার্বিক বিষয় মনিটরিং করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়াও উপেজলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দূর্যোগকালীন ত্রান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১শ মেট্রিকটন চাল, ২লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, ১৬৬ বান্ডিল টিন এবং ৩৫০০ টি কম্বল মজুত রাখা হয়েছে।  

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান জানান, উপজেলার সকল আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখাসহ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সতর্ক রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। উপজেলা পরিষদে ৩টি মোবাইল নম্বরসহ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। 

কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান,  ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়ায় সমুদ্র থেকে সকল মাছ ধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহিপুর, ঢোস, মৌডুবি শিববাড়িয়া নদসহ বিভিন্ন পোতাশ্রয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে শুরু করেছে।

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল প্রবল শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসছে এমন খবরে দক্ষিণ উপকূলের মানুষের মাঝে ভয় আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ নভেম্বর মাসে যে সকল ঘূর্ণিঝড়  হয়েছে সবগুলো ছিলো ভয়াবহ। এরমধ্যে ১৯৭০ সালরে ১২ নভম্বের এবং ২০০৭ সালে ১৫ নভম্বেররে ঘূর্ণিঝড় সিডর উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী লন্ডভন্ড করেছিলো। 

অপর দিকে পটুয়াখালী নদী বন্দরের  কর্মকর্তা খাজা সাদিকুর জানান, পটুয়াখালী অভ্যন্তরীন নৌ-রুটে চলাচল কারী ৬৫ ফুটের চেয়ে ছোট সকল নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে ঢাকার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ডাবল ডেকার লঞ্চ চলাচল করবে।

জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধূরী জানান, ঘুর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। যে কোন পরিস্থি মোকাবেলায় আমরা কন্ট্রোল রুম খুলে দিয়েছি। সকলকে সতর্ক থাকা আর নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।

 

বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর