শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩ ০০:০০ টা

স্নেহার হারমোনিয়ামে গান পাগল ভূত

নাইস নূর

স্নেহার হারমোনিয়ামে  গান পাগল ভূত
স্নেহা শ্যাম বর্ণের ভারি মিষ্টি একটা মেয়ে। ক্লাস টুতে পড়ে ও। তবে ওর ভাব এরকম যেন অনেক বড় ক্লাসে পড়ছে। তবে চঞ্চলা মেয়ে হলেও ওর গানের গলা অনেক সমুধুর। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা ওস্তাজির কাছে গান শিখে স্নেহা। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, ছড়াগান সবকিছুই শিখেছে সে। পড়াশোনার পাশাপাশি গানশেখানোর ব্যাপারেও অনেক আগ্রহী স্নেহার শিক্ষিকা মা বীথি সুলতানা। স্নেহা তার মাকে অনেক ভালোবাসে। তবে মা যখন পড়াশোনার জন্য মাঝে মধ্যে বকে তখন স্নেহার তাকে ভিলেন মনে হয়। আজ স্নেহার মন অনেক ভালো। মাকে আজ ভিলেন নয়, ভালো বন্ধু ভাবছে সে। কারণটা হলো, মা আজ জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে বলেছে তাকে। কিছুদিন পর প্রতিযোগিতা শুরু হবে, তাই স্নেহা সকাল-সন্ধ্যা গান অনুশীলন করতে লাগল। এভাবেই এক সপ্তাহ কাটল। প্রতিযোগিতার আর একদিন বাকি, স্নেহা মাকে জড়িয়ে বলছে, মা মনি,আমার ভীষণ ভয় লাগছে। কেন? কাল আমি গান গাইতে পারব তো! কেন পারবে না? ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে। নিজের প্রতি আত্দবিশ্বাস রাখ। ঠিক আছে মা মনি। অনেক রাত হয়েছে, এখন ঘুমিয়ে পড়। আচ্ছা মা মনি। সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর স্নেহা চুপিচুপি বেলকনিতে বসে হারমোনিয়াম নিয়ে গান অনুশীলন করতে লাগল। স্নেহা হঠাৎ খেয়াল করল তার হারমোনিয়াম একাই সুর তুলে বাজছে। একটু অবাক হলেও স্নেহা গান গাইতে লাগল সেই সুরের তালে, 'আজি ঝরো ঝরো মুখরও বাদলও দিনে...' একটু পর সে একজনের কথা শুনতে পেল স্নেহা, তুমি তো ভালো রবীন্দ্রসংগীত গাও, এবার একটা নজরুলসংগীত গাও স্নেহা খুশি হলো। এত বেশি খুশি হল যে, সে কে তা না জানতে চেয়ে গাইতে লাগল 'শুকনো পাতার নূপুর পায়ে...' এবার একটা দেশের গান গাও 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল...' কিছুক্ষণ পর সেই পরিচিত গলার স্বর বলল, বাহ বেশ গেয়েছ। ভালো গান গাওয়ার জন্য তোমাকে একটা উপহার দিতে চাই। কি উপহার? সেটা তোমাকে আগামীকাল দিব। ঠিক আছে। সকাল ৬টা। স্নেহাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলছে তার মা স্নেহা মা মনি, ঘুম থেকে জাগো। কি হলো, কি ভাবছ? স্নেহা এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল মা মনি আমার উপহার কোথায়? কিসের উপহার? কাল গান গেয়ে যে উপহারটা পেলাম। ও বুঝেছি, তুমি মনে হয় স্বপ্ন দেখেছ, যাও হাতে-মুখে পানি দিয়ে আস। কিছুক্ষণ পর শিশু একাডেমী যেতে হবে, সবকিছু গুছিয়ে নাও। ঠিক আছে মা মনি। অতঃপর গানের প্রতিযোগিতা শুরু হলো। সংগীতে 'ক' বিভাগে রবীন্দ্র, নজরুল ও দেশের সব গানেই প্রথম স্থান অধিকার করল স্নেহা। তিনটি পুরস্কার পাওয়ার পর মহা আনন্দে বাসায় ফিরল সে। বাবা- মাও অনেক খুশি হলো। সেদিন রাতে আবার সেই পরিচিত গলার স্বর স্নেহা শুনতে পেল। স্নেহা, তোমাকে অনেক স্বাগতম। ধন্যবাদ। কিন্তু আমার উপহার? আরে পাগল মেয়ে, এই তিনটি পুরস্কারই তো তোমার উপহার। ও, তাই। কিন্তু তুমি কে? তুমি কি উপহার বানাও? ধূর, বোকা মেয়ে, তা হবে কেন? তাহলে তুমি কে? আমি একজন গানপাগল ভূত। যার গান ভালো লাগে, তার হারমোনিয়ামে ভর করি এবং তাকে পুরস্কার পেতে সাহায্য করি।

সর্বশেষ খবর