শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা
গল্প

ভূতের আড্ডা

আবু নেসাব শাহীন

ভূতের আড্ডা

মাঝরাত। কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই। একেবারে সুনসান। আদনান ছাড়া বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আগামীকাল থেকে তার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। তাই রাত জেগে পড়ালেখা করছে সে। এক সময় পানির পিপাসা পায় তার। সে বই বন্ধ করে ড্রইং রুমে আসে। ড্রইং রুমে এসে দেখে ফ্লোরে ঘুমুচ্ছে বাবলু। বাবলু তাদের বাসায় কাজ করে। সে ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে পরপর দুই গ্লাস পানি খায়। তারপর ডাইনিং টেবিলের দিকে পেছন ফিরে সামনের দিকে হাঁটতে যাবে এমন সময় কে যেন বলে ওঠে, 'আজ আর ঘুমুতে পারবে না'।

আদনান ভয়ে চমকে ওঠে। তার সাড়া শরীর কাঁপে। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তারও কিছুক্ষণ পর আবার ওকে যেন বলে ওঠে, 'ভয় পাচ্ছ। ভয় পেলে কী আর ভূতের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারবে?'

'ভূত! ভূতের সঙ্গে আড্ডা?' ভয়ে আদনান ঢোক গিলে বলল।

'হ্যাঁ। আমরা ভূত।' ভূতেরা শব্দ করে হাসে। হাসি শুনে মনে হচ্ছে এটা মানুষের হাসি না। সে মনে মনে ভাবে বাবলুকে ডেকে তুললে ভালো হবে। বাবলুর শরীরে প্রচণ্ড জোর। বাবলু একাই সবগুলো ভূতের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে। বাবলু ভালো ভূতের গল্প বলে। অধিকাংশ ভূত নাকি গ্রামে থাকে। শহর তাদের ভালো লাগে না। তবে মাঝে মাঝে রাতের বেলা দল বেঁধে ভূতেরা শহরে বেড়াতে আসে। 'বাবলুকে ডেকে তুলে লাভ নেই। সে আমাদের কিছুই করতে পারবে না।' একটা ভূত চিকন গলায় বলল।

এ কথা শুনে আদনান ভীষণ ভয় পায়। সে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু কথা বলতে পারে না। তার জিভ জড়িয়ে যায়। অন্য একটা ভূত বলল, 'আমরা ছয় ভাই। ডাইনিং টেবিলের ছয়টি চেয়ারের বসে আছি।'

আদনান কী উত্তর দেবে ভেবে পায় না। চেয়ার নড়ার স্পষ্ট শব্দ হয়। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, 'আমি কী চলে যাব?'

তার কথা শুনে মেয়েলি গলায় কে যেন হাসে। হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যায়। আবার চেয়ারে ওঠে বসে। সে অবাক হয়ে বলল, 'তোমরা না বললে তোমরা ছয় ভাই। এখন দেখি তোমাদের সঙ্গে একজন মেয়েও আছে?'

তার কথা শুনে সব ভূত এক সঙ্গে হেসে ওঠে। মেয়েলি গলার ভূতটা বলল, 'ভূত সমাজ সম্বন্ধে তোমার কোনো ধারণা নেই। আজ তোমার একজন ক্লাসমেটকে বলেছো পৃথিবীতে ভূত বলে কিছু নেই। পৃথিবীতে যদি ভূত বলে কিছু না থাকে তাহলে আমরা কারা? আমরা কী মানুষ?'

আবারও সব ভূত একসঙ্গে হাসে। আদনানের ইচ্ছে করছে পেছনে ফিরে তাদের দেখতে। কিন্তু সাহসে কুলোয় না। একটা ভূত বুড়ো মানুষের গলায় বলল, 'ভূতেরা ছেলেমেয়ে উভয় গলায় কথা বলতে পারে, বুঝলে?'

'হ্যাঁ বুঝলাম।'

'এ মুহূর্তে তোমার আমাদের দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, না?'

আদনান খুব অবাক হয়। ভূতেরা কত সহজে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে। একটা ভূত হাই তুলতে তুলতে বলল, 'রাত অনেক হয়েছে। এবার ওকে ছেড়ে দাও।'

'হ্যাঁ ছেড়ে দাও। তা না হলে বেচারা ভয়েই মারা যাবে। আর তা ছাড়া আগামীকাল ওর ক্লাস ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষা।' আর একটা ভূত কাশতে কাশতে বলল।

'হ্যাঁ। চল আমরা এবার অন্য কোথাও যাই। রাত শেষ হওয়ার আগে কদমতলী গ্রামের বাঁশঝাড়ে সবাইকে ফিরে যেতে হবে। যাওয়ার আগে বাবলুকে একটু শাস্তি দিয়ে যাব। ও আমাদের নিয়ে অনেক মিথ্যে কথা বলে।' একটা একটা করে ভূত চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ায়। চেয়ার নড়ার স্পষ্ট শব্দ শুনতে পায় সে। বাম হাতের কব্জি উল্টিয়ে ঘড়ি দেখে। অন্ধকারেও ঘড়ির কাঁটাগুলো জ্বলজ্বল করছে। এখন রাত দুটো বেজে ত্রিশ মিনিট। সে বেশ কিছুক্ষণ পর সাহস করে গলা খাকাড়ি দেয়। নাঃ কারোর কোনো সাড়াশব্দ নেই। সে ভয়ে ভয়ে পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়। ডিম লাইটের আবছা আলোয় কাউকে দেখতে পেল না সে। সে দ্রুত তার ঘরে আসে এবং লাইট জ্বালিয়ে রেখেই উপুর হয়ে শুয়ে পড়ে। তার বুক ধক ধক করছে।

সকাল বেলা বাবলু এসে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলল, 'ছোড ভাই কাইল রাইতে আমারে ভূতে ধরছিল। আর এট্টু অইলে তো তারা আমারে মাইরায়ে ফালাইছিল।'

'বলিস কী?' আদনান দুই চোখ কপালে তুলে বলল।

'হ। ঠিকই বলছি। এখন ওঠ। তোমার নাশতা রেডি।' বাবলু চলে যায়। সে বাথরুম সেরে স্কুল ড্রেস পরে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র আধা ঘণ্টা বাকি।

 

সর্বশেষ খবর