শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
গল্প

পুতুল

তরিকুল জনি

পুতুল

করবীর আব্বু ঢাকায় চাকরি করে। এ জন্য ওর মন খারাপ থাকে। আব্বুকে সব সময় কাছে পাওয়া যায় না। তার বান্ধবীরা যখন তাদের আব্বুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, কিংবা বাজারে যায় অথবা খেলা করে তখন করবীর মন খুব খারাপ থাকে। আম্মুকে নাক ফুলিয়ে বলে, 'আব্বুকে চলে আসতে বলো, তার আর চাকরি করতে হবে না।' আম্মু তখন বলে, ঢাকায় চাকরি না করলে তোমার পুতুল কে আনবে? ঢাকায় চাকরি করে বলেই তো পুতুল আনতে পারে। তোমার জন্য কত্ত পুতুল আনে।'

এটা অবশ্য সত্যি কথা। করবীর আব্বু যখন বাড়িতে আসে তখন পুতুল আনে। কি সুন্দর সুন্দর পুতুল! তখন অবশ্য ওর মন ভালো হয়ে যায়। পুতুল নিয়ে যখন বাড়ির পাশে খেলতে যায়, তখন তার বান্ধবীরা নিতে চায়। এ একটু ছুঁতে চায়, ও একটু ছুঁতে চায়। তখন করবীর মন ভরে যায়। তার বান্ধবীরা আফসোস করে বলে, 'ইস, আমার আব্বু যদি ঢাকায় চাকরি করত, তা হলে আমার জন্যও পুতুল আনত।' এসব কথা শুনে করবীর বুক ভরো ওঠে। সত্যিই তো তার আব্বু ঢাকায় চাকরি করে বলেই তো এত সুন্দর সুন্দর পুতুল আনতে পারে।

তো করবীর আব্বু একদিন ছুটিতে বাড়িতে এল। এবার মাত্র একটা পুতুল এনেছে। এই দেখে তো করবী রেগে একেবারে তেলেবেগুন। নাক ফুলিয়ে, চোখ বাঁকিয়ে বলল, এবার কেন মাত্র একটা পুতুল এনেছ? তোমার সঙ্গে আমার আর কোনো কথা নেই। তোমার সঙ্গে আমার আড়ি।'

মেয়ের নাক ফুলানো দেখে আব্বু বললেন, মামণি এদিকে এসো। এই দেখ এই পুতুল কথা বলে।' বুড়ি মানুষের মতো কথা শুনে আব্বু হেসে ফেলল। তারপর বললেন, এই বুড়ি মা, এই দেখ। পুতুলের মুখের কাছে মুখ নিয়ে আব্বু বললেন, 'দেখ করবীর মন খারাপ।'

ওমা কি আশ্চর্য পুতুলও বলল, 'দেখ করবীর মন খারাপ।' এই কথা শুনে করবীর চোখ একে বারে ছানাবড়া হয়ে গেল। করবী পুতুলটা হাতে নিয়ে বলল, 'আব্বু আমার খুব পছন্দ হয়েছে।' ওমা পুতুলটাও বলল, 'আব্বু আমার খুব পছন্দ হয়েছে।'

এ পুতুল পেয়ে করবী খুব খুশি, বেজায় খুশি। তার বান্ধবীরা তো আরও খুশি। কেউ কেউ তো রীতিমতো ঈর্ষা করছে। যখন খেলার মাঠে করবী পুতুলটা নিয়ে যায়, তখন সবাই খেলা বাদ দিয়ে ছুটে এসে ওর কাছে জড়ো হয়। আর একের পর এক কথা বলে। পুতুলটাও তাদের কথা শুনে শুনে কথা বলে।

সেই সুন্দর পুতুলটা একদিন হারিয়ে গেল। কোথাও পাওয়া গেল না সেই পুতুলটা। করবী মন খারাপ করে, কাঁদতে কাঁদতে, আব্বুর কাছে মোবাইল করল। আব্বু সব শুনে বললেন, 'মামণি আর কেঁদো না, আমি তোমার জন্য আর একটা ভালো পুতুল কিনে আনব।' একথা শুনেও করবীর কান্না থামে না। সে কেঁদেই যাচ্ছে। তার কান্ন শুনে আম্মু এক তাড়া দেয়। আম্মুর তাড়া খেয়ে সে আরও জোরে জোরে কান্না করতে লাগল। আব্বু মোবাইল করে, আম্মুকে বকা দিল। আম্মু মনে হয় আব্বুর বকা শুনে এবার করবীর সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলছে, 'আম্মু আমার সোনা মা, সোনা করবী আর কেঁদো না। আমিই তোমাকে আবার একটা পুতুল কিনে দেব।'

সে রাতে কাঁদতে কাঁদতে করবী শুয়ে পড়ল। তার পরের দিনও মন খারাপ করে থাকল। মাঠে খেলতে গেল না। আব্বুর সঙ্গে একবার মন খারাপ করে কথা বলল। আব্বুর সেই একই কথা, 'মামণি কেঁদো না, মন খারাপ কর না, আমি তোমার জন্য আবার নতুন পুতুল কিনে আনব।' কিন্তু করবী কীভাবে মন ভালো করবে? তার এত প্রিয় পুতুলটা হারিয়ে গেল আর সে মন ভালো রাখবে? এটা কোনো কথা হলো?

কী যেন মনে করে করবী রাতে শোয়ার সময় বারান্দায় এসে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল, 'আমার পুতুল তুমি কোথায়?' কথাটা শুনে কে যেন বলে উঠল, 'আমার পুতুল তুমি কোথায়।' করবী কথাটা শুনে আম্মুকে বলল, 'আম্মু আম্মু আমার পুতুল কথা বলেছে।' প্রথমে আম্মু কথাটা শুনে বিশ্বাস করেনি। তারপর করবীর কান্না শুনে বলল, 'বলো তো এবার কথা, দেখি তোমার পুতুল কিভাবে কথা বলে।'

করবী আরও জোরে চিৎকার দিয়ে বলল, 'পুতুল তুমি কোথায়?'

এবার পুতুল বলে উঠল, 'পুতুল তুমি কোথায়।' কথাটা শুনে আম্মু বুঝতে পারল। তার পুতুলটা বারান্দার পাশে ফুলবাগানের ঝোঁপের মধ্য থেকে কথা বলছে। আম্মু বারান্দার গেট খুলে ঝোঁপের ভেতর থেকে পুতুলটা নিয়ে এলো। পুতুল পেয়ে করবী তো একেবারে খুশিতে আটখান।

পুতুলটা পাশে রেখে রাতে শুয়ে পড়ে সে। কিন্তু রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারল না। আনন্দে, খুশিতে প্রায় না ঘুমিয়ে রাত পার করল। শুধু রাতে ভেবে ছিল, যদি পুতুল কথা বলতে না পরত তাহলে কী হতো। ভাগ্যিস পুতুলটা কথা বলতে পারে। তা না হলে আর হয়তো পুতুলটা পাওয়া যেত না।

 

 

সর্বশেষ খবর