শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
গল্প

পেত্নী

জুলফিকার শাহাদাৎ

পেত্নী

এক যে ছিল পেত্নী রানী, তার ছিল চার হাত, দেখলে তাকে ভয়ে সবাই হতো কুপোকাৎ। তার ছিল এক লম্বা শুঁড় ও লম্বা বারো দাঁত-রাত দুপুরে ঘরে ঘরে করতো সে উৎপাত। কাউকে ধরে কান চিবুবে, কাউকে দেবে গুঁতো, অকারণে শাস্তি দিতে খুঁজতো কেবল ছুতো। পেত্নী রানীর ভয়ে ভয়ে কেউ হতো না বের, প্রজার মনে এই নিয়ে রোজ চিন্তা জমে ঢের।

পেত্নী রানীর অত্যাচারে রাজ্যে ত্রাহি ভাব, কেমন করে মানবে সবাই পেত্নীর এ স্বভাব। রাজ্যে ছিল ভেড়া, মহিষ, শেয়াল, ঘোড়া, হাতি, ভাবলো সবাই কেমন করে থামায় এ বজ্জাতি। পেত্নী অনেক বুদ্ধিমতী, মাথায় অনেক ফাঁদ, কাউকে করে আত্দীয় সে, কাউকে দেবে বাদ। ভাগ করা আর শাসন করা পেত্নী ভালোই জানে, রাজ্যে কোথায় হচ্ছেটা কী পৌঁছে রানীর কানে।

একদিন এক গোপন ঘরে ঘোড়া এবং শিয়াল, আলাপ করে- কেমন করে ভাঙবে বাধার দেয়াল। ঘোড়া বলে ভাই-

প্রাণ নিয়ে আজ বেঁচে থাকার কোনো উপায় নাই। হাঁটতেও ভয়, খেলতেও ভয়, গাইতেও ভয় লাগে- বলুন, বলুন রাজ্যে সবাই এমন ছিলাম আগে?

শেয়াল নাড়ায় লেজ, পেত্নী রানীর চোখে-মুখে কিসের এতো তেজ? রাজ্য কি তার একার ভিটে? আমরা কেবল ঝুট- প্রয়োজনে করবো লড়াই, দাঁড়িয়ে সবাই উঠ।

সাহস পেয়ে ঘোড়া যখন চিহিচিহি ডাকে- খবর পেল কাকে। পেত্নী রানীর বার্তা বাহক কাক, মাথায় পাকা টাক। সে কি করে দেরি? হ্যাপী - ভেরি ভেরি।

খবর পেয়ে পেত্নী রানী ছাড়লো বিষম হাঁক- শেয়াল, ঘোড়া ডাক। তাদের নামে দে হুলিয়া, তাদের ধরে আন-তলোয়ারের মাথায় ওদের করবো রে খান-খান।

রাজ্যজুড়ে বাদ্য বাজে শেয়াল- ঘোড়া কই-চতুর্দিকে খোঁজাখুঁজি আর মহা হৈচৈ। ভয়ে সবাই কাঁপতে থাকে-কী যেন কী হয়-হঠাৎ বিপর্যয়।

ঘোড়া হঠাৎ পড়লো ধরা, তার কপালে ফাঁসি- পেত্নী বলে, মৃত্যু ভালো, রাজ্য ভালোবাসি। পেত্নী রানীর শাসন ভয়ে রাজ্যে সবাই চুপ, কখন মরণকূপ-। কাকে ডাকে, কী কপালে যায় না ভাবা ঠিক-স্তব্দ চতুর্দিক।

পেত্নী রানী বেজায় খুশি. ঘোড়ার হলো ফাঁসি, শত্রু খতম, শঙ্কা বিদায় আমোদ রাশি রাশি। এই ভয়ে আর কেউ কখনো করবে না তো জট-সব দেবে চম্পট।

কদিন যেতেই নতুন খবর নিয়ে এলো কাক-শত্রু শেয়াল দেখেছে সে, সঙ্গীও এক ঝাঁক। দল ভারী তার, বিষম সাহস, মিছিল নিয়ে আসে-হাজার হাজার পশু-পাখি রয়েছে চারপাশে।

পেত্নী বলে কী-

উজির কোথায়? পেয়াদা কই?

খবর দিয়েছি।

খবর পেয়ে উজির-নাজির অস্ত্র নিয়ে ছুটে-হাজার পশুর দল দেখে ফের ভয়ে কেঁপে উঠে।

কয় গুলিতে মারবে এদের, কয় বোমাতে কাত-ভাবনা অকস্মাৎ।

পেত্নী রানীর আদেশ পালন করতে গিয়ে যদি-লাশের মিছিল বাড়ে আরো-গড়ায় লহু নদী- কার কী এতে লাভ? ওরা কেন নেবে এমন শকুনে স্বভাব?

হঠাৎ সবাই থামে-আকাশ থেকে অমনি যেন ফেরেশতারা নামে।

উজির-নাজির পেয়াদারা ছুড়লো না আর গুলি-উড়লো না আর একটি পাখি, একটি পশুর খুলি। সবাই মিলে ছুটলো তখন পেত্নী রানীর বাড়ি-

বললো সবাই সমস্বরে-চাই না খবরদারি, আয় বেরিয়ে আয়-

দৃশ্য দেখে পেতি্ন রানী হঠাৎ হতাশায়।

উপায় তো নেই আর-

নামলো রানীর ঘাড়।

 

বন্দি হলো পেত্নী রানী- রাজ্যজুড়ে হৈ

নাচছে পাখি, নাচছে পশু রৈ রৈ রৈ রৈ।

 

 

সর্বশেষ খবর