শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বুদ্ধিমতী অবনী

গল্প

মিজানুর রহমান মিথুন

বুদ্ধিমতী অবনী

মামার সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর লিপন আনন্দে নেচে উঠেছে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা ঘর মাথায় তুলেছে। বাবা বারান্দায় বসে সংসারের মাস শেষের হিসাব মিলাচ্ছেন। লিপন নাচানাচি করছে আর ‘মামা আমার মামা, গায়ে লাল জামা’ নিজের বানানো এই গান গেয়ে যাচ্ছে। এতে লিপনের বাবার হিসাবে ব্যাঘাত ঘটছে। তাই বাবা হিসাব রেখে একটু রাগী গলায় লিপনকে তলব করলেন।

-এই লিপন, কি হয়েছে তোমার? ঘর মাথায় তুলেছো কেন? আমার কাছে আসো। বাবার কণ্ঠ শুনে লিপনের দম আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। বাবার কথায় লিপন কোনো রকমের সাড়া দিচ্ছে না। তার নাচানাচি এবং গান মুহূর্তেই থেমে গেছে। তার ডাক শুনে লিপন তাড়াতাড়ি তার পড়ার টেবিলে গিয়ে পড়তে বসেছে।

লিপন পড়ছে, ‘গরু একটি শান্ত প্রাণী, গরু একটি শান্ত প্রাণী...’

বাবার ডাকে সাড়া না দেওয়াতে বাবা লিপনের পড়ার রুমে এলেন। বাবার উপস্থিতি লিপন বুঝতে পেরেছে আজ তাকে অনেক বকাঝকা শুনতে হবে। বাবার মেজাজ চরমে উঠেছে। বাবাকে দেখে লিপন পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে চেয়ার থেকে উঠে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।

বাবা রাগী কণ্ঠে বললেন-

-কি পড়তেছিলে?

-গরুর রচনা।

লিপন জবাব দিলো।

গরুর রচনা পড়তেছো তা বুঝলাম, আমি জানতে চাচ্ছি বারবার কোন লাইনটি পড়তেছিলে?

মাথা নিচু করে লিপন জবাব দেয়,

-‘গরু একটি শান্ত প্রাণী...।’ এই লাইনটি।

-সুন্দর কথা গরুর রচনাতেও লেখা রয়েছে। আর তুমি মানুষ হয়ে এত অশান্ত কেন? একটু শান্ত হতে চেষ্টা করো। আমি কখনো ঘরের মধ্যে কোনো রকমের চেঁচামেচি শুনতে চাই না। এখন পড়তে বসো।

লিপন মাথা নিচু করে চেয়ারে বসলো। বাবার কাছ থেকে এমন কথা শুনে লিপনের মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। সেই সঙ্গে কিছুটা অপমানিত বোধ করলো। লিপন সিদ্ধান্ত নিলো, বাবা রাতে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমানোর পরে ফোন দিয়ে বিষয়টা মামাকে জানাবে।

লিপনের মামার নাম হচ্ছে নিয়াজ চৌধুরী। মামা এ বছর ঢাকা সিটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছেন। বাড়িতে থাকতে মামার একটি গোয়েন্দা বাহিনী ছিল। তার বাহিনীর দুরন্তপনায় সবাই তটস্থ থাকতো। দুনিয়ার সব খবর নিয়াজ মামার কাছে থাকতো। তাই লিপনের বাবা নিয়াজকে ‘নিউজ’ চৌধুরী বলে বলে ক্ষ্যাপাতো।

বাবা বকুনি দেওয়ার পরে লিপনের মন খারাপ হয়ে গেলো। সে পড়ার টেবিলে গিয়ে চুপচাপ বসে আছে। বকাঝকা দেওয়ার পরে গরুর রচনাটি পড়তে সে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। এখন লিপন ‘পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞান’ বইটি খুলে বসে আছে। পড়ছে কি পড়ছে না, তা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরে লিপনের কাছে অবনী এসেছে। অবনী লিপন ভাইয়ার মন খারাপ দেখে তার পিঠ ঘেঁষে দাঁড়ালো। লিপন কোনো কিছুই খেয়াল করছে না। এবার অবনী তার লিপন ভাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে,-মন খারাপ করো না ভাইয়া। আব্বু তো ওরকমেরই। তুমি ফোনে কার সঙ্গে কথা বলে এতো আনন্দিত হয়েছিলে?

জানতে চায় অবনী।

মুখ ভারী করে জবাবে লিপন বলে,

-আর কার সঙ্গে কথা বলবো। নিয়াজ মামার সঙ্গে কথা বলেছিলাম।

এরপর অবনী তার চোখ কপালে তুলে বলে,-সর্বনাশ! এই সময়ে তুমি নিয়াজ মামার সঙ্গে কথা বলেছো! একথা বাবা যেন কিছুতেই বুঝতে না পারে। তোমার মনে নেই? নিয়াজ মামা দুষ্টমি করে বলে মাঝে মধ্যে বাবা তাকে সহ্য করতে পারেন না। তাছাড়া এখন বাবার মন খারাপ। এই মুহূর্তে নিয়াজ মামার কথা শুনলে তিনি আরও রেগে যাবেন। কারণ বাবা মনে করবেন নিয়াজ মামা তোমাকে কোনো দুষ্টুমির ফন্দি শিখিয়ে দিয়েছেন, সেটা শুনে তুমি আনন্দে মেতেছো। জানো ভাইয়া, এদিকে আমি বুঝতে না পেরে বাবার দোকানের হিসাবের খাতার কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে পুতুল বানিয়েছি। বাবা তা হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন। এই নিয়ে সকাল থেকে বাবার মন খারাপ। সব কিছুতেই বাবা মাথা গরম করে কথা বলছেন। আমাকে সকালে ইচ্ছামতো বকাঝকা করেছেন। তখন তুমি স্কুলে ছিলে। এখন আর আমাদের কোনো বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলার দরকার নেই। বাবা যা বলবেন তা আমাদের শুনে যেতে হবে। বাবার মন মেজাজ বুঝে কয়েক দিন চলতে হবে। আমাদের দুষ্টুমির কারণেই বাবার মন খারাপ হয়েছে।

এমন বুদ্ধিদীপ্ত কথা শুনে লিপন অবনীকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। অবনীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে লিপন বলে,

-অবনী আসলেই তুমি অনেক বুদ্ধিমতী। এরপর রাতে খাবার খেয়ে লিপন ও অবনী যে যার মতো করে ঘুমিয়ে পড়লো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর