শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

পুডুর বুদ্ধি

আশিক মুস্তাফা

পুডুর বুদ্ধি

বড্ড খিটখিটে মেজাজ হয়ে গেছে খালামনির। কদিন হলো পুডুদের বাসায় এসেছেন। প্রথম দুদিন ভালোই ছিলেন। এরপর কারও সঙ্গে ভালো করে কথা বলেন না। কথায় কথায় রেগে যান। এই খিটখিটে মেজাজের কারণও উদ্ধার করে ফেলেছে পুডু। খালামনি যেই মোবাইলে গেমস খেলে সেই মোবাইল গত কয়েকদিন ভালো সার্ভিস দিচ্ছে না। খেলার মাঝখানে হুটহাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাবাকে বলেও কাজ হচ্ছে না। রাজ্যের ব্যস্ততা তার। পুডু খালামনির কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে অন করতে চাইলো। না হচ্ছে না। পেছনের কভার খুলে ব্যাটারি বের করল। জিভ দিয়ে ব্যাটারিতে চার্জ আছে কিনা তা পরীক্ষা করল। তারপর মামনির মোবাইল নিয়ে তাতে এই ব্যাটারি লাগিয়ে মোবাইল অন করল। ঠিকই আছে। তো সমস্যা? সমস্যা ঠিকই ধরে ফেলেছে পুডু। মামনির মোবাইল থেকে ব্যাটারিটা খুলে ফের খালামনির মোবাইলে লাগাল। তবে তার আগে খাতা থেকে একটা কাগজ ছিঁড়ে তা ভাঁজ করে ব্যাটারির নিচে বসিয়ে দিল। এরপর ফোনের রেড বাটনে চাপ দিয়ে ধরতেই মোবাইল অন হয়ে গেল।

খালামনি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল সবই ঠিকঠাক হচ্ছে। গেমসও খেলা যাচ্ছে। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, এত সহজে কীভাবে মোবাইলটা সারিয়ে দিল পিচ্চিটা। আবেগ ধরে রাখতে না পেরে পুডুকে বুকে নিয়ে কপালে আদর করে চুলে বিলি কেটে দিলেন। মামনি বললেন, এত লাই দিস না দুষ্টুটারে। বাসায় কিছুই রাখা যায় না।

ফ্রিজ, এসি, টিভি থেকে শুরু করে হাতঘড়িও রেহাই পায় না তার হাত থেকে। যা সামনে দেখে তাই খুলতে বসে। এই বলতে বলতে পুডুর রুম থেকে বড় একটা বাক্স টেনে এনে বললেন, এই বাক্সটায় দেখ, কল-কব্জায় ঠাসা।

খালামনি বলেন, কই পায় সে এসব?

কই আর। স্কুলে, মাঠে-ঘাটে যেখানে যা পায় সব ছাইপাস কুড়িয়ে এনে এই বাক্সে রাখে।

পুডু বলে, দেখ মা, আমি যা পাই তাই আনি না। যেটা কাজে আসবে কেবল সেটাই আনি। কেন, গত মাসে বাবার হাতঘড়ির ব্যাটারিটা কে লাগিয়েছিল?’

খালামনি অবাক চোখে পুডুর মায়ের দিকে তাকাতেই তিনি বলেন, তা তো লাগিয়ে দিয়েছিস। তাই বলে এত কলকব্জা এনে ঘরে ঢুকাবি?

অত কলকব্জা না থাকলে তো ঘড়িটা ঠিক করতে পারতাম না। অই ব্যাটারিটা কিন্তু ছোট কাকুর পুরনো ঘড়ি থেকে খুলে রেখেছিলাম।

মামনি আর কিছু বলেন না। কিচেনে হাঁটা ধরলেন। ছোট খালা বলেন, অ্যাই পুডু, আমার পার্টসের চেইন টেনে লাগানো যাচ্ছে না। একটু দেখবি?

কথা শেষ হতে না হতেই তিনি পার্টসটা এনে পুডুর হাতে দিলেন। পুডু টেনেটুনে দেখল। না কাজ হচ্ছে না। মায়ের ড্রেসিং টেবিল থেকে নারিকেল তেলের বোতল নিয়ে দুফোঁটা তেল চেইনের ওপর ফেলে চেইন টান দিল। অমনি ঠিক হয়ে গেল। খালামনি চেঁচিয়ে বলেন, ও বুবু, দেখে যা, তোর ছেলে তো আমার পার্টসও ঠিক করে ফেলেছে!

পুডুর মা রান্নায় ব্যস্ত হলেও সব কথা শুনছেন আর মনে মনে হাসছেন। তিনি ভালোই জানেন; তার দুষ্টুটা অনেক বুদ্ধিমান! 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর