শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফুলপরীদের গান

বৃষ্টি রানী

ফুলপরীদের গান

মাহিয়াদের বাড়িটা বিশাল। চল্লিশ কাঠার ওপর। চারিদিক দেয়াল, দুইটা গেট। বাড়ির ভিতরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। বিল্ডিংটা পূর্বপাশে পাঁচ কাঠার ওপর। দ্বিতল বিল্ডিং। চারটি রাস্তা গেট বরাবর। চারপাশে ফুলের বাগান। বৈচিত্র্যময় একটা পরিবেশ। ফুল আর ফুলে ছেয়ে আছে গোটা বাড়ি। এ বাড়ির সদস্য সংখ্যা ৫ জন। মাহিয়ার বাবা মা ছোট ভাই ও মাহিয়ার দাদা একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। নাম আকরাম খান। তিনি নম্র ভদ্র ও মিশুক, অহংকার বা গৌরব তার মাঝে নেই। এলাকার কোনো লোক বলতে পারবে না এ ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে হাত পেতে নিরাশ হয়ে ফিরেছেন। এদিকে এলাকায় যথেষ্ট সুনাম আছে। মাহিয়ার দাদা একজন কবি। তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। যে কবিতাগুলো সযত্নে আলমারিতে রেখেছেন। একটিও পত্রিকায় প্রকাশ করেননি। মাহিয়ার দাদা বড় মনের মানুষ হওয়ায় বাড়িটা মানুষের বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। ফুলপিয়াসী মানুষগুলো বিকাল ৪টা থেকে এখানে প্রবেশ করতে পারবে। সন্ধ্যা নামার সময় আগন্তুক অতিথিরা বিদায় নেয়। জ্বলে ওঠে ফুল বাগানে মনোরঞ্জন বাতি। ফুলের রংয়ের সঙ্গে বাতিগুলো সাজানো হয়েছে। আশেপাশে যে বাড়িগুলো, যে রাস্তা আছে সরকারি লাইটের আলোর দরকার হয় না। পথচারীরা রাতে ফুলের গন্ধে ছুটে যায় আপন বাড়ি। মাহিয়ার দাদা অনেক রাত অবধি জেগে থাকেন। তিনি প্রায় বাগানে পরী দেখেন। কিন্তু এই কথাটা কাউকে বলেন না। বারান্দার এক কোণে বসে যখন কবিতা লেখেন ডিমলাইটের আলোতে ঠিক তখনই ফুলপরীরা নামেন। সারা বাগান ঘোরেন। ফুলপরীদের এই আসা-যাওয়া কতদিনের তিনি নিজেও জানেন না। এই বাগানের ফুলগুলো এতটাই উষ্ণ, এতটাই সুগন্ধ যে মনকে কেড়ে নেয়। মাহিয়ার বয়স মাত্র সাত বছর। ক্লাস টুতে পড়াশোনা করে। মাহিয়ার দাদু বিকালে মাহিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সারা বাগান ঘোরেন। দু একটি কথা মাহিয়ার সঙ্গে বলেন। মাহিয়া দাদুর খুব ভক্ত। মাহিয়া প্রায়ই তার দাদুকে বলতেন, আচ্ছা দাদু তুমি ফুলকে এত ভালোবাস কেন? দাদি কি ফুলের মতো সুন্দর ছিল। দাদু বলতো মানুষ কখনোই ফুলের রূপ নিতে পারে না। ফুলের সুভাষ নিতে পারবে, বাগান গড়তে পারবে। মাহিয়া রাতেই দাদুর কাছে ঘুমাত। রাতে যখন পরীরা বাগানে নামতো দাদু ভাবতো মাহিয়াকে জাগিয়ে পরীদের দেখাই। আবার ভাবতো এই ছোট মানুষ ডানাওয়ালা পরীদের দেখলে ভয় পেতে পারে। কোনো পরীর আঁচড় লাগতে পারে। নানান কিছু ভেবে মাহিয়াকে জাগাত না। মাহিয়া দাদুর পরীদের দেখে তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পরীরা যখন মানুষের গন্ধ পায় তখন আর সেখানে থাকে না। উড়ে চলে যায়। এক দিন রাতে মাহিয়া পানি খাবে বলে দাদুকে ডাকে। কোন সাড়া না পেয়ে দাদুকে খুঁজতে বারান্দায় এসে পড়ে। চুপচাপ দাদুর পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে বাগানে পরীরা নেচে নেচে ফুলের সঙ্গে দুলছে। এই দৃশ্য দেখা মাত্রই মাহিয়া তার দাদুকে বলল, দাদু ভাই এত ঝলমলে আলো কি সুন্দর চেহারা, কি সুন্দর ডানা এরাই পরী। দাদু ভাই তুমি তো কোনোদিন বলনি বাগানে রাতে পরী নামে। তবে দাদু ভাই তুমি যে কবিতা লেখ আমি পড়ে দেখেছি সব কবিতাই পরীদের নিয়ে। মাহিয়ার দাদু মাহিয়ার মুখ চেপে ধরে বলল, চুপ মানুষের গন্ধ পেলে মানুষের কথা শুনলে ওরা সেখানে আর আসে না। তুমি কিন্তু দাদু ভাই এ কথা কাউকে বল না, তাহলে পরীরা আর কোনোদিন বাগানে আসবে না। মাহিয়া এরপর থেকে রাত জেগে পরীদের নাচ গান দেখে। ফুল বাগানে ফুলপরীরা এত ঝলমলে আলো বিচরণ করে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। মাহিয়ার শখ জাগে পরীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। কিন্তু পরীরা বড় হিংসুটে, মানুষ দেখলে পালায়।

    

     পঞ্চম শ্রেণি, ট্যালেন্ট কিন্ডার গার্টেন, বেড়া, পাবনা।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর