নিভান খুব ছোট। তোমাদের মতো ছোট। থাকে গ্রামে, গাঁয়ে। যেখানে রাতে চাঁদ ওঠে কমলালেবুর মতো। আমলকীর ডালে ডালে, পাতায় পাতায় দোয়েল, শালিকেরা নাচে। কুমড়োর হলদে ফুল ফুটে। যেখানে এঁকে বেঁকে বহুদূর চলে গেছে নদী। যেখানে প্রদীপ জ্বলে। মাছেরা ঝাঁকে ঝাঁকে খেলা করে। মাছরাঙা পাখি উড়ে বেড়ায়। রাতের বেলায় বাতাসে ভেসে আসে বাতাবিলেবুর সাদা ফুলের গন্ধ। সেখানে অন্ধকারে জোনাক জ্বলে।
নিভানের বন্ধু হলো দোয়েল পাখি। সে দোয়েল পাখির সঙ্গে খেলা করে। খেলা করে বিকালে। নিভানের মন খারাপ হলে দোয়েল পাখি শিস দিয়ে গান শোনায়। এক বিকালের পরে যখন সন্ধ্যা নামে। আকাশে তারা ঝিকমিক করে। দূরে ধান সবুজের মাঠে কমল বাতাসে পাতারা সব দোলে ওঠে। দোয়েল পাখি নিভানকে একটা মাঠে দিয়ে গেল। দোয়েল পাখির দুজন বন্ধুর সঙ্গে নিভানকে পরিচয় করে দিয়ে বলল, তারা দুজন পরী। এখন থেকে তারাও তোমার বন্ধু। আজ আমরা পরী বন্ধুদের সঙ্গে আকাশে উড়ে উড়ে খেলা করব।
পরীরা আমাদের নতুন বন্ধু। নিভান বলল।পরীরা নিভানের কাছে এলো। ছোট্ট একটা ফুল দিল। তারা লাল, নীল, শাড়ি পরেছে। আঁচল উড়ছে বাতাসে। তাদের সমস্ত শরীর থেকে আসছে কাঁচা বকুলের গন্ধ। নিভানকে পরীরা বলল, আমাদের সঙ্গে যাবে, আমাদের দেশে? সেখানে আরও পরী বন্ধুরা আছে। আছে জাদুর ঝরনা। তোমাকে পেলে তারা খুব খুশি হবে।
দোয়েল পাখি আর নিভান রাজি হয়ে গেল। লাল পরী বলল, আমার ডানায় ধরে থাক।
ডানায় করে উড়িয়ে নিয়ে চলল। নীল পরীটাও উড়ছিল। নীল আকাশে তারা উড়ে উড়ে চাঁদের কাছে গেল। একটা ভীষণ বড় কমলালেবুর মতো চাঁদ। নিভান খুব খুশি হলো। নিভান বলল, চাঁদের দেশে যাই। লাল পরী বলল, কী বোকা তুমি, ওখানে পড়া লেখা না করলে যাওয়া যায় না। যারা পড়তে পারে, লিখতে পারে তাদের চাঁদের বুড়ি আদর করে। খুব আদর করে কলম দেয়। বই বাঁধাইয়ের সুতো দেয়। আরও দেয় জাদুর খাতা। নিভান বলল, তোমরা কি যাও?
নীল পরী বলল, যাব না কেন? আমরা পড়তে পারি। লিখতেও পারি।
পরী রাজ্যে এসে নামল তারা। একটা সবুজ মাঠে অনেক পরী ছিল। তারা আকাশে লাল, হলুদ, নীল, বেগুনি রঙের বেলুন উড়ালো। নাচ দেখাতে লাগল। বাতাসে উড়ে উড়ে নাচে তারা।
একটা পাখির কাছে নিয়ে নিভানকে তার পিঠে বসিয়ে দিল।
নিভান বলল, এখানে পাখি মানুষকে নিয়ে উড়তে পারে?
পরীরা সবাই বলল, এখানে আমরা প্রতিদিন পাখিদের পিঠে করে স্কুলে যাই। কারণ আমরা এখানে সবাই লেখাপড়া করি।
পাখি নিভানকে নিয়ে উড়ে গেল। চাঁদের পাশ দিয়ে রং ছড়িয়ে উড়ে গেল। নিভান দেখল চাঁদে চাঁদে ভরে গেছে চারপাশ। গোলাপি রঙের চাঁদ, লাল, নীল, সবুজ রঙের চাঁদ।
এত রঙের চাঁদও হয় তোমাদের আকাশে! নিভান বলল।
কল্পনা করলেই হয়। নীল পরী বলল।
বড় বড় থালার মতো গাছের সবুজ পাতায় তারা খেতে দিল ফল। লাল টকটকে ডালিম ফল। গাছ ভরা পাকা হলদে আম। ডালিম আর আম খেয়ে নিভানের মন ভরে গেল। দোয়েল পাখিও মনের সুখে গাইল গান। পরীরা বলল, চল তোমাদের এবার বাড়িতে পৌঁছে দিই। লাল পরী, নীল পরীর ডানায় বসে নিভান আর দোয়েল পাখি বাড়ি ফিরল। পরীরা তাদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেল, তাদের পরী রাজ্যে।