দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে আবীর বাবা মার সাথে এসেছে তার দাদুবাড়ি।
আবীরের বয়স যখন সাত আট বছর তখন ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তার বাবা। ছোট একটা ব্যবসা থেকে তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েছেন।
বাড়ি গাড়ি সবই হয়েছে কিন্তু কোন ফাঁকে যেন গ্রামের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। মাটির টানে তিনি ফিরে এসেছেন ঈদের ছুটির দিনগুলো গ্রামে কাটাতে।আবীরের দাদু মুক্তিযোদ্ধা। আবীর দাদুর কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছে। গল্প শুনে চোখে জল চলে আসে। দাদুর পায়ে গুলি লেগেছিল। এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। আবীর একা একা ভাবে আমি আরও আগে কেন গ্রামে আসলাম না।
আবীর এখানে বন্ধু পেয়েছে একটা। চাচাতো ভাই হৃদয়। দুজনেই সমবয়সী। তুমি করে বলতে চাইলেও বলা যায় না তুই এসে যায়। আবীরের আরও একটা বিষয় ভালো লেগেছে তা হলো হৃদয়ের খেলনা সামগ্রী দেখে। নানারকমের হাজার খানেক মার্বেল।
এতো মার্বেল তুই কোথায় পেলি হৃদয়?
কিছু আমি কিনেছি। আর বেশিরভাগই খেলে জিতেছি।
মার্বেল খেলা তুই জানিস?
না। আমায় শেখাবি? কেমন করে খেলে?
মার্বেল নিয়ে অনেক ধরনের খেলা আছে। তোকে সব শিখিয়ে দেব চিন্তা করিস না। এই মারবেলগুলো তোর নে?
আবীরের চোখ খুশিতে জ্বলে ওঠে।
আচ্ছা চল মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়াই। আচ্ছা এতগুলো ঘুড়ি কোথায় পেয়েছিস?
সব বাবা বানিয়েছে।
আমি বলবো তোকেও বানিয়ে দেবে।
দুজনে লাটাই ঘুড়ি নিয়ে মাঠে দৌড় দেয়।
দুজনে ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়ে লাটাই হাতে পাশাপাশি ঘাসের ওপর বসে থাকে। হৃদয় বলে দেখ আবীর সুতোতে কান পেতে। আবীর সুতোতে কান পেতে বিস্মিত হয় হাওয়ার গান শুনে। আরও বিস্মিত হয় খোলা আকাশটা দেখে। এমন আকাশ কতদিন হয়নি দেখা।
হৃদয় লাটাইটা আবীরের হাতে ধরিয়ে দেয়। আবীর অন্যমনস্ক হতেই হাত থেকে লাটাইটা ফসকে যায়। দুজন মিলে ঘুড়ির পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে। একসময় শিমুলগাছের সাথে ঘুড়ির সুতো আটকে যায়। দুজন মিলে বহু কষ্টে ঘুড়িটাকে উদ্ধার করে।
পরের দিন আরও আনন্দে কাটে দুজনার। দুজনে দুটা বাইসাইকেল নিয়ে বের হয়। নদীর ধারে পায়ে চলা সরু পথ। দুজনে ছুটতে থাকে একসাথে। বাড়ি ফেরার নেই তাড়া। মাঝেমধ্যে আমগাছ নয়তো বটগাছের নিচে বসে খানিক জিরিয়ে নেয়।
আবীর হৃদয়কে শুধায়,
আচ্ছা আমাকে বল এই নদীটার নাম কি?
চিকনাই।
চিকনাই। চিকনাই নাম কেন?
একসময় অনেক বড় ছিল এখন ধীরে ধীরে চিকনা হয়ে যাচ্ছে চেয়ে দেখ।
বাইসাইকেল চালিয়ে আমরা যদি নদীর পিছু পিছু নদীর শেষ প্রান্তে যেতে পারতাম।
ঠিক বলেছিস। আমিও এমনটা ভেবেছি। এটা আঁকাবাঁকা ঘুরতে ঘুরতে পদ্মায় গিয়ে মিশেছে।
কিছুদূর যেতেই ওরা দেখে থোকা থোকা লাল শাপলা ফুটে আছে। কিছু ফুল তুলে বাড়ির পথে ছুটতে থাকে ওরা। রাতে দাদির হাতের মজাদার রান্না, জোনাকির খেলা দেখে আনমনা হয়ে যায় আবীর। আগামীকাল ফিরতে হবে ঢাকায়। আবার ইস্কুল, হোমওয়ার্ক, কোচিং, ল্যাপটপ, গেম।
এই পরিবেশের সাথে অনাবিল স্বাধীনতা, নির্মল আনন্দের সাথে আবার একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যাবে।