শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিনির দেশে লাল পিঁপড়া

মোনোয়ার হোসেন

চিনির দেশে লাল পিঁপড়া

লোকালয় থেকে অনেক দূরে বাস করত এক লাল পিঁপড়ার পরিবার। সেই পরিবারে ছিল মা ও তার পাঁচ ছেলে মেয়ে। তারা যে দেশে বাস করত সে দেশটা ছিল খুব গরিব। সে দেশে ঠিকভাবে খাবার পাওয়া যেত না। মা সারাদিন মাঠে ঘুরে ঘুরে যে খাবার সংগ্রহ করত তা খেয়ে কারও পেট ভরত না। ফলে প্রায় না খেয়ে থাকতে হতো তাদের।

তারা একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খবর পেল ধনী দেশ থেকে আজ এক পিঁপড়ার রানী আসবে আমাদের দেশে। খাবার নিয়ে। আমাদের দেশের সবাইকে পেট পুরে খাওয়াবে। তা শুনে পাঁচ ভাই বোনের সে কী খুশি। নাচে তাক ধিনা ধিন ধিন!

পিঁপড়ার রানী এলো দুপুরের দিকে। সঙ্গে তার কত বড় বাহিনী! সবার মাথায় খাবারের বোঝা। নিয়ে এসেছে একেবারে বড় বড় তিনটা মিষ্টি! পাঁচ ভাইবোন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মিষ্টিগুলোর দিকে। বাহ রে, কত বড় বড় মিষ্টি!

পিঁপড়ার রানী গরিব দেশের সবাইকে মিষ্টিগুলো ভাগ করে দিলেন ।

পাঁচ ভাইবোন মিষ্টি পেয়ে কী যে খুশি! চেটে পুটে একেবারে পেট ভরে খেল।

সবার বড় যে তার নাম পিঁপকু। সে সাহস করে গেল রানীর কাছে। বলল, রানী মা, আপনি এত বড় বড় মিষ্টি কোথায় পেয়েছেন?

পিঁপড়ার রানী ছিল খুব ভালো। মনে কোনো অহংকার ছিল না তার। হেসে বলল, আমি যে দেশে থাকি ওই দেশটা খুব ধনী। খাবারের কোনো অভাব নেই। ছোট মিষ্টি, বড় মিষ্টি, চমচম সব আছে। কী খাবে তুমি? সবই  আছে সেই দেশে।

সে দেশটা কোথায়?

লোকালয়ে।

লোকালয়ে!

হুম, লোকালয়ে।

লোকালয় মানে কী?

লোকালয় মানে- সেখানে মানুষ বাস করে।

পিঁপকু বলল, আমরা কি যেতে পারি না সে দেশে?

হ্যাঁ, পারও।

ঠিক আছে আমি যাবো।

পিঁপকু গেল এবার মায়ের কাছে। বলল, মা, চলো আমরা রানীর সঙ্গে লোকালয় দেশে যাই। সে দেশে খাবারের কোনো অভাব নাই।

মা পিঁপড়া বলল, না, লোকালয় দেশে যাওয়া যাবে না।

কেন মা?

লোকালয় খুব ভয়ের দেশ ।

ভয়ের দেশ কেন?

সে দেশের লোকেরা পায়ে চাপা দিয়ে পিঁপড়াদের মেরে ফেলে।

পিঁপড়ার রানী বলল, এখন আর মানুষ পিঁপড়াকে পায়ে চাপা দিয়ে মেরে ফেলে না। তারা পিঁপড়াকে ভালোবাসে।

পিঁপড়া রানীর কথা শুনে মা পিঁপকুকে পাঠাল লোকালয় দেশে।

পিঁপকু লোকালয়ে গিয়ে উঠল এক বাসায়। সে বাসায় ছিল দুটো ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। তারা ইশকুলে পড়ে। সকালে মা তাদের পায়েস রান্না করে টিফিন দিল। পায়েস! পিঁপকুর জিহ্বায় পানি চলে এলো। সে টুপ করে পায়েসের সঙ্গে ঢুকে পড়ল ইশকুলব্যাগে।

ইশকুলব্যাগে ঢুকে শুধু পায়েস খায় আর খায়। খেয়ে দেয়ে সে আর নড়তে পারে না। পেট হয়ে যায় ঢোল!

ইশকুলের টিচার বললেন, আজ তোমাদের কোনো ক্লাস হবে না। তোমাদেরকে আজ সুগার মিল দেখতে নিয়ে যাওয়া হবে।

সবাই আনন্দে বলে উঠল, হুড়রে!

ইশকুলের বাসে করে সবাইকে সুগার মিলে নিয়ে যাওয়া হলো। সবাই হুড়রে হুড়রে করে সুগার মিল দেখছে।

ছাত্র-ছাত্রীরা বলল, সুগার মিলে এসে যদি সুগারই না খাওয়া গেল, তাহলে সুগার মিলে এসে কী আনন্দ?

হেড টিচার সুগার মিলের এমডিকে বলে সবাইকে সুগার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।

সবাই মজা করে সুগার খেতে লাগল।

পিঁপকু বলল, সুগার কী রে! সবাই তো বেশ মজা করেই খাচ্ছে দেখছি। একটু দেখি তো। বলে

পিঁপকু ব্যাগের ভিতর থেকে পিল পিল করে হেঁটে বাইরে বেরিয়ে এলো। মাথা বের করে বাইরে উঁকি মারল।

এ কী রে! এটা কিসের সুগার? এটা তো চিনি!

পিঁপলু ব্যাগের ভিতর থেকে মাথা আরও একটু বের করে চারদিকে ভালো করে তাকাল। চারদিকে যে শুধু চিনি আর চিনি! যতদূর চোখ যায় শুধু চিনি আর চিনি!

চিনি দেখে পিঁপকুর চোখ চকচক করে ওঠে। এটা নিশ্চয় চিনির দেশ ।

ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে সে। পিল পিল করে  চিনির ওপর হাঁটে। হাঁটে আর চিনি দেখে। চিনি দেখে আর ভাবে, এবার মা আর ভাইবোনদেরকেও  চিনির দেশে নিয়ে আসবে সে। তারপর সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে মহাসুখে বাস করবে চিনির দেশে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর