শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

অরণ্যের বৈশাখী বুদ্ধি

আশিক মুস্তাফা

অরণ্যের বৈশাখী বুদ্ধি

‘তৌবা, তৌবা, এসব কী বলেন আপামনি?’

কী এমন বলল ছোট্টমোট্ট পৃথিবীটা?

এই পৃথিবী সেই পৃথিবী না; যেই পৃথিবীতে আমরা থাকি। এই হচ্ছে অরণ্যদের পৃথিবী। দুষ্টু পৃথিবী। এই গ্লাস ভাঙল তো এই টিকটিকির পিছু নিল। এই হো হো হাসল তো এই হাউমাউ কেঁদে ঘর ভাসিয়ে বর্ষা নিয়ে এলো! ছোট পৃথিবীটা নতুন কথা বলতে শিখেছে। আলুথালু কত কথা! বাড়ির বড়রা তার কথা শোনে আর হেসে গড়াগড়ি খায়। অরণ্যের বাবা অফিস থেকে আসার পর সেদিন বলে, ‘বাবা বাবা, তোমাল মোবাইলতা দাও।’ বাবা মোবাইল হাতে দিতেই বলে, ‘তুমি গেমতা দিলিত করে দিতো?’ বাবা চোখ কপালে তুলে ডাকে, ‘ও নুপুর, নু-পু-র, তোমার মেয়ে কী বলে শোনো।’

কিচেন থেকে দৌড়ে এলো অরণ্যের মা। সব শুনে বুকে জড়িয়ে আদরে ভরিয়ে তুলে মেয়ের মুখ। ছোট্টমোট্ট আদুরে পৃথিবীটা এই বৈশাখে তিন বছরে পড়বে। অথচ দুনিয়ার পাকা কথা বলে! গত বৈশাখে গ্রামে দাদুবাড়ি গিয়েছিল। বৈশাখী মেলায় ঘুরেছে বাবা-মায়ের কোলে চড়ে। অরণ্য তাকে কোলে নিতে চেয়েছিল। বাবা-মা দেয়নি। অরণ্য যে অন্য আট-দশ জনের মতো নয়। সে অনেক কিছুই পারে না। ঠিকঠাক কথাও বলা শিখেনি। বড়রা পৃথিবীর কথা শোনে আর বলে, ‘ও নুপুর, তোর ছেলে কথা না বললেইবা কি, মেয়েটাতো একাই সব বলে বেড়ায়।’ অরণ্যের মা হাসে। আর অরণ্য ঘাড়টা একপাশে হেলিয়ে রাখে। এখনো তার গলায় বিপ লাগানো থাকে। নাহয় লালায় জামা ভিজে যায়। বুকে ঠাণ্ডা লাগে। কাশি হয়। হাঁপানি বাড়ে। শরীর খারাপ করলেও সে অন্যদের মতো শুয়ে থাকে না। বোনের সঙ্গে খেলে। ইশারায় কথা বলে। তার সব কথা বুঝে বোনটা। পৃথিবী যখন কথা বলতে শিখেনি তখনো অরণ্য তার ভাষা বুঝত। কি করে? অরণ্যের মা বলে, আমার ছেলেটা অনেক বুদ্ধিমান। বড়দের চেয়েও অনেক বেশি বুঝে। এই বুদ্ধিমান অরণ্য সেদিন বাবা-মা আর বোন পৃথিবীর সঙ্গে গিয়েছে বেইলী রোড। বৈশাখী কেনাকাটায়। বাইরে গেলে অরণ্য কারও দিকে তেমন তাকায় না। বোনের সঙ্গেও সেভাবে খেলে না। নিজের মতো থাকে। এ জন্য তাকে তেমন একটা বাইরে নেওয়া হয় না। তারও যেতে ইচ্ছে করে না তেমন। তবে সেদিন নিজ থেকেই বায়না ধরেছিল। মা বুঝতে পেরে নিয়ে গিয়েছেন। তারা মেলা ঘুরছে আর কি কিনবে তা পছন্দ করছে। পৃথিবী যা দেখে তাই নিতে হাত বাড়ায়। বাবা তাকে আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যায়। একটা দোকানে গিয়ে তারা খৈ, মফ্ফা, মিঠাই, নাড়ু, কদমা, বাতাসা, সন্দেশ কিনে। পৃথিবী দোকানেই খাওয়া শুরু করে। বাবা টাকা দিয়ে পকেটে মানিব্যাগ রাখতে গিয়েই অরণ্যর কথা মনে পড়ে। একি, পকেটে মোবাইলটাওতো নেই! এখন উপায়? অরণ্যই বা গেলো কই? মা অস্থির হয়ে ডাকে। বাবাও। কিন্তু পৃথিবী কথা বলে না। মেলার তথ্য কেন্দ্রটা খুঁজে বের করে। তারপর সেদিকে আগাতেই মাইক থেকে ঘোষণা আসে- ‘অরণ্যের বাবা মা আর পৃথিবীকে বলছি, আপনারা অনুগ্রহ করে তথ্য কেন্দ্রে চলে আসুন।’ হুড়োহুড়ি করে তারা তথ্য কেন্দ্রে যায়। গিয়ে দেখে, অরণ্য ইয়া বড় একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে বসে আছে। পৃথিবী গিয়ে জড়িয়ে ধরে অরণ্যকে। সে ব্যাগ থেকে রঙিন চুড়ি বের করে বোনকে পরিয়ে দেয়। সাদার উপর  লাল রঙের ব্লকের একটা শাড়ি বের করে হাতে দেয়। মাকেও। রহিমা খালার জন্যও একটা শাড়ি নিয়েছে। সেটা সবচেয়ে সুন্দর। বাবা আর তার জন্য নেওয়া পাঞ্জাবীও বের করে। বাবা-মা অবাক। সে কখন কিনল এসব? এই ভাবতে ভাবতে বাসার পথ ধরল।

গাড়িতে বসে পৃথিবী বলে, ‘মোবাইল তেকে আমাকে একতা বৌ তিনে দাও ভাইয়া! আমি তার থঙ্গে থেলবো!’  এই কথা শুনে অরণ্যকে দেখা শোনা করা রহিমা খালা বলেন, ‘তৌবা, তৌবা, এসব কী বলেন আপামনি?’

অরণ্য আনমনে হাসে। পৃথিবী তার দিকে তাকিয়ে থাকে। পাশেই বাবা-মা। তারা বুঝতে পারে। অরণ্য অনলাইনে পছন্দ করে এসব কিনেছে। কিনবেনাইবা কেনো, তার ছেলে অনেক বুদ্ধিমান। অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি! আর এই কেনাকাটা হচ্ছে তার বৈশাখী বুদ্ধি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর