শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

রিমঝিমের স্বপ্নঘোর

রুনা তাসমিনা

রিমঝিমের স্বপ্নঘোর

কান্নার কারণে চোখমুখ ফোলা এখনো রিমঝিমের। চাঁদহীন সন্ধ্যার আকাশে তারার মেলা বসেছে। মনোযোগ অন্যদিকে ফেরানোর জন্য সমীর আঙ্গুলের ইশারায় বিভিন্নদিকে দেখিয়ে মেয়েকে চেনাতে লাগলো জেমিনি, লিব্রা, লিও... নির্লিপ্ত চোখে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে ধরা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

কিট্টু তারা কোনটি বাবা?

সমীর আকাশের দিকে মগ্ন থাকায়, আনমনে জবাব দিল, কিট্টু নামে তো কোন তারা নেই মা!

তাহলে মা মিথ্যে বললো কেন? যারা মারা যায় তারা নাকি আকাশে তারা হয়ে যায়?

আবার ঝরঝর করে কেঁদে দিল রিমঝিম। তাড়াতাড়ি মেয়েকে সামলানোর জন্যে বলে, না না মা ঠিকই বলেছে। চলো দুজন মিলে একসাথে খুঁজি কিট্টুকে।

বাবা কিচ্ছু চেনেনা। ও-ই যে, যে তারাটি বেশি ঝিকমিক করছে? ও-ই তো আমাদের কিট্টু! ঋতু কখন ছাদে এসেছে সমীর, রিমঝিম কেউই টের পায়নি। মাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে থাকে রিমঝিম।

সেদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্যে তৈরি করাচ্ছিলো আম্মু। এমন সময় দারোয়ান আঙ্কেল হাতের মুঠোর ভিতর করে ছোট্ট বিড়ালছানা নিয়ে এসে হাজির। সকালে গেট খুলেই দারোয়ান আঙ্কেল দেখতে পেয়ে নিয়ে এসেছে। ভেজা ছোট্ট শরীর  ঠাণ্ডায় কাঁপছে। গায়ের লোমগুলো সাদাকালো মেশানো। আম্মু ছোট্ট একটি তোয়ালে নিয়ে এসে যত্ন করে জড়িয়ে নিল। বুয়া আন্টিকে বললো ছোট বাটিতে করে দুধ দিতে। ক্ষুধার্ত বাচ্চাটি কেমন চুকচুক করে ওগুলো খাচ্ছে! তার ভেজা ছোট্ট শরীর তখনো ঠাণ্ডায় কাঁপছে। স্কুলে যেতে ঝিমঝিমের একটুও ইচ্ছে করছে না। আবার স্কুলে না গেলে পড়া মিস হয়ে যাবে। বেচারা পড়ে গেলো দোটানায়। শেষে মা বোঝালো, এই তো কয়েকঘণ্টা! এরপরেই তো তুমি স্কুল থেকে ফিরে খেলতে পারবে ওর সাথে! লক্ষ্মী মেয়ের মতো মাথা নেড়ে সায় দেয় রিমঝিম। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাবার সাথে স্কুলের

যাওয়ার পথে কথা হয়, আজ বন্ধুদের বলতে পারবে, ওরও একটি আদুরে বিড়ালছানা আছে।

ঝিমঝিমের অনেক বন্ধুর বাসায় বিড়াল আছে। ওদের গল্প প্রতিদিন শোনে। মাকে স্কুল থেকে আসার সময় অনেকবার বলেছে একটি বিড়ালছানা বাসায় নিয়ে আসতে। রাজি করাতে পারেনি। আজ নিজেই দারোয়ান আঙ্কেলের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়ায় অনেক খুশি রিমঝিম। রিমঝিমের এখন খুব মজা! নতুন খেলার সঙ্গীকে নিয়ে খুব আনন্দে কাটে সময়। সে-ও বুঝে গেছে এ বাসায় যে মিষ্টি মেয়েটি আছে, সে তাকে অনেক ভালোবাসে। ওর নাম রাখা হয়েছে কিট্টু।  থাকার জন্যে ঝুড়ি, খাবার থালা, পানির বাটি, দুধের বাটি কেনা হলো সবই। দিন কয়েক যেতে যেতেই ঘরের একজন সদস্য হয়ে গেলো। আদর যত পায়, তার আবদার তত বাড়ে। ঘরের সোফা, বিছানা, আলমিরা কখন ঘুমানোর জন্য সে কোন জায়গা বেছে নেয় তার ঠিক নেই। মাঝে মাঝে আবার ঘুমিয়ে থাকে রিমঝিমের পাশে, ঠিক ওর মতোই বালিশে মাথা রেখে! তেমনি ক্ষুধা লাগলেও রিমিঝিম যখন বাসায় থাকে পায়ের সাথে গা ঘসে ঘসে মিঁউ মিঁউ করে খাবার দিতে বলবে! আম্মু আব্বুর সঙ্গেও রিমঝিমের মতো সে বেড়াতে যায় তার ঝুড়িতে বসে। বল কিট্টুর অনেক পছন্দের খেলনা। এক পা থেকে আরেক পায়ে ছুড়ে দিয়ে বল খেলে দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড়ের মতো। তার বল খেলা আব্বুর খুব পছন্দ। তাই নানা রঙের বেশকিছু বল আব্বু কিট্টুর জন্যে এনে রেখেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটু একটু করে যতোই সে বড় হচ্ছে, সারা ঘরে বাড়তে থাকে তার রাজত্ব। সেদিনও পার্কে খেলছিল কিট্টু বল নিয়ে। হঠাৎ বল গড়িয়ে গেলো রাস্তায়, কিট্টুও দৌঁড়াল বলের পিছু পিছু। আব্বু যখন দৌঁড়ে গেল ততক্ষণে গাড়ি চাপা পড়ে সব শেষ। রক্তাক্ত কিট্টুকে দেখে রিমঝিমের কান্না কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছিল না। আম্মুর চোখেও পানি। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবুদ্ধি আব্বু! তাড়াতাড়ি নেয়া হলো পশু হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তার আঙ্কেল বললেন এখন আর কিছু করার নেই! ওখানেই ওরা রেখে দিয়েছে কিট্টুকে। শেষবারের মত দেখে বাসায় ফেরার পথে খালি ঝুড়িটি নিয়ে আম্মুর কোলে মাথা গুঁজে রিমঝিমের সে কি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না!

ম্যাঁ-ও! ম্যাঁ-ও! কে ডাকে! ঘুম ভেঙে চমকে চোখ খুলে রিমঝিম! কিট্টু তো পাশেই বসে!

তাহলে এগুলো সব স্বপ্নে দেখছিলো!

খাবারের সময় হয়েছে কিট্টু তাই তার আট বছরের আম্মুকে ডাকছে ম্যাঁ-ও! পরম আদরে কিট্টুকে বুকে জড়িয়ে ধরে রিমঝিম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর