শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্গাপূজায় সেলফি প্রতিযোগিতা

রণজিৎ সরকার

দুর্গাপূজায় সেলফি প্রতিযোগিতা

এক.

আমার ভাগনে স্ব্রুত। নবম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতি বছর দুর্গাপূজায় ওর উপহার চাই চাই। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কিছু চাচ্ছে না। দিন দিন সুব্রত বড় হচ্ছে, সেজন্য কি মামার কাছে উপহার চাইতে লজ্জা পাচ্ছে! সুব্রতকে ফোন করলাম। বললাম, কেমন আছ?

সুব্রত বলল, ‘মামা, আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’

অসুস্থ মানুষের মতো ধীরে ধীরে বললাম, আমার ভীষণ মন খারাপ।

‘মন খারাপ কেন মামা? তুমি কি অসুস্থ?’

না। তবে আমার মন খারাপের কারণ কিন্তু তুমি। এবার তুমি চিন্তা করে কারণটা বের কর। একটু পর আবার তোমাকে কল করব। এখন রাখি। এই বলে মোবাইল ফোনের লাল বাটুন চেপে লাইন কেটে দিলাম।

দুই.

কয়েক মিনিট চলে গেল। সুব্রত ফোনও করে না। এসএমএসও দেয় না। ভাবলাম, নিশ্চয় ভাগনে আমার ভয় পেয়েছে। তাই ফোন করার সাহস পাচ্ছে না। আমি আবার ফোন করলাম, সুব্রত কারণ বের করতে পারনি বুঝি?

‘না মামা, কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’

মন খাপারের কারণ হলো দুর্গাপূজা এসে গেছে কিন্তু তুমি এখন পর্যন্ত মামার কাছে কিছুই চাইলে না। ভাবছি, আমার প্রতি তুমি রাগ করে আছ কি না।

‘তোমার প্রতি রাগ করেনি মামা। আমি বড় হয়েছি না। তাই চুপ করে আছি, দেখি তুমি নিজে থেকে কিছু দাও কি না। সেই আশায় বসে আছি।’

ও তাই! এবার ব্যতিক্রম কিছু চাও। পছন্দের মতো জিনিস চাও।

‘ঠিক আছে মামা আমাকে একটু সময় দাও। আমি ভেবে বলছি।’

আচ্ছা, তোমাকে সময় দেওয়া হলো।

তিন.

একটু পর সুব্রত ফোন করে বলল, ‘মামা, কিছু বিষয় আমার মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। তোমাকে কোনটা থেকে কোনটা বলি। আর কোনটাই বা তোমার ভালো লাগবে।’

সুব্রতর কথা শুনে ভাবলাম, কী না কি দাবি করে বসে। আচ্ছা, যে দাবি করবে করুক। মামা হিসেবে সে দাবি পূরণ করতেই হবে আমাকে। তাই ভেবে চিন্তে বললাম, তোমার কি দাবি। আমাকে বলো?

‘মামা, প্রতি বছরের মতো এ বছর কোন শার্ট-প্যান্ট চাই না। তুমি আমার লেখকমামা হিসেবে আমি যে দাবি করব। সে দাবিটাই নিশ্চয় পূরণ করবে। এটা আমার বিশ্বাস।’

লেখক মামা হিসেবে দাবিটা পূরণ করতে পারব! আচ্ছা, তোমার দাবিটা পেশ করো। দেখি পারি কি না।

‘শুনে তো রাগ করবে না মামা।’

না না রাগ করব না। তুমি বলো সুব্রত।

‘মামা এবার দুর্গাপূজায় আমাদের পূজা ম-পে সেলফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাই। তোমাকে সাহায্য করতে হবে।’

আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম, ভাগনে মোবাইল ফোন দাবি করবে কি না। কারণ সেলফি তুলতে তো ভালো মোবাইল ফোন দরকার। আচ্ছা, দেখি সুব্রতর মুখ থেকে শুনি ও কি বলে। বললাম, সুব্রত, তোমাকে কি দিয়ে সাহাস্য করতে পারি।

‘মামা তুমি বই দেবে।’

বই! দুর্গাপূজা বই দিয়ে তুমি কি করবে? ম-পের সামনে কি বইয়ের দোকান দেবে?

‘না না মামা। বইয়ের দোকান দেব না। বন্ধুরা মিলে দূর্গা ম-পের কাছে সেলফি জোন করব। সেখানে দশণার্থীসহ যে কেউ সেলফি তুলতে পারবে। সেই সেলফি আমাদের বারোয়ারি পূজা ম-পের নাম একটা ফেসবুক আইডি থাকবে, সে আইডিতে তার তোলা সেলফি পাঠাবে। তার মধ্যে থেকে সেরা দশজনকে প্রতিদিন আরতি পর পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে তাদের হাতে বই তুলে দিতে চাই। পুরস্কারের বইগুলো তুমি সংগ্রহ করে দেবে কি না বলো মামা। যদি দাও তাহলে আয়োজনটা করতে পারি।’

সুব্রতের কথা শুনে আমি সত্যি সত্যি অবাক হলাম। আইডিয়াটা কোথায় থেকে পেল জানার জন্য সুব্রতকে বললাম, মামা এই আইডিয়া কোথায় থেকে পেলে তুমি?

সুব্রত বলল, ‘মামা আমরা অনেক বন্ধু এখন বই পড়ে না। বই পড়া বাদ দিয়ে ফেসবুক, ও ইন্টারনেট গেম খেলাসহ কত কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ওরা বাবা মা অনেক করে বকা দেয় তবু নেশাটা ছাড়তে পারে না। তুমি তো বলেছিলে, অনেকেই তো বই পড়ার অভ্যাস ছেড়েই দিচ্ছে। তাই আমি ভাবলাম, বই উপহার দিয়ে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায় কি না।’

আমি খুমি হয়ে বললাম, ভেরি গুড। লেখক মামার লেখক ভাগনে বলে কথা।

‘তোমার লেখা বই হোক আর অন্য লেখকের; আমাকে কিন্তু পঞ্চশটা বই দিতেই হবে।’

অবশ্যই দেব। তুমি কোন চিন্তা করো না। পূজায় সেলফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করো। বইয়ের ব্যবস্থা করছি।

‘ওকে মামা।’

আরও কিছু লাগবে তোমার।

‘না মামা, এবার পূজায় আর কিছু লাগবে না আমার।’

ওকে মামা।

আমি মনে মনে ভাবলাম, এমন আইডিয়া বের করার জন্য সুব্রত কিছু না চাইলেও। ওর জন্য অবশ্যই ভালো কিছু নিয়ে যাব।

চার.

ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হলো। মন্দিরের পাশে সেলফি জোনে জমে উঠল সেলফি প্রতিযোগিতা। সেলফি প্রতিযোগিতার আয়োজন দেখে বুঝতে পারলাম, সুব্রতদের ম-পে পূজার আনন্দ বেড়ে গেছে দ্বিগুণ।

সর্বশেষ খবর