১.
এই মেঘ এই রোদ। তাতে ভারি খুশি প্রজাপতির দল। আর বাতাসও তো দিব্যি ফুরফুরে। ওদের আর পায় কে!
নোটন পা টিপে টিপে বেরোয় প্রজাপতি ধরবে, পা টিপে টিপে। নয়তো মা দেখলে যে বকবে!প্রজাপতিদের খুব মজা। কেউ ওদের বকে না। মা-বাবা-বড়দা-সুদ্ধু ওরা ওড়ে।
ওই বড় হলুদটা কেমন গোত্তা খেয়ে খেয়ে পাল্লা দিচ্ছে ফড়িঙের সাথে। ওটাকেই ধরবে নোটন।
২.
নোটন ওটার পিছু নেয়। হলুদবিবি, খুব উড়ছ বাছা! আর নয়।
হলুদবিবি বেগুনি-লালের নকশিকাটার সাথে জোট বেঁধে উড়ে উড়ে শ্বেতকরবীর কাছে যায়। ওটা বড্ড উঁচু।
নোটনের ডাল বাইতে ভয় নেই। এখন তো মামণি আর দেখছে না!
কিন্তু ডালে নাড়া খেতেই দুই প্রজাপতি পগারপাড়। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে নোটন। উড়ছে তো উড়ছেই। উঁহু, ভারি দেমাগ। আমার বড়মণির চেয়ে বুঝি রূপসী তোমরা! কাঁচকলা!
৩.
ধাঁ করে কেমন বাগান থেকেই বেরিয়ে যায় এবার। গেট বন্ধ। শ্যাওলা ধরা ইটের পাঁজায় চড়ে। ইচ্ছা করলে লাফ দিতে পারে ও। কিন্তু হলুদবিবি কোথায়! ওব্বাবা, এখানে যে মেলা বসে গেছে। কত প্রজাপতি, মাগো। হলুদবিবিকে ধরা মুশকিল।
এতসব অচেনা প্রজাপতির ভিড়ে নোটন একটু লজ্জা পায়। তার ওপর ওকে পেয়ে সব প্রজাপতি মিলে ছেঁকে ধরে।
৪.
নোটনকে ঘিরে ওরা গায়, আর মহানন্দে নাচে।
নোটন বুড়ি
করব চুরি
ধাঁ গুড়গুড় ধাঁ
ফুন্তর যা
গান গেয়ে যেই না দু’পাক নেচেছে, ওমা কী কান্ড! সব কিনা হুড়মুড় করে বদলে যেতে থাকল!
শরীরটা হয়ে গেল হালকা। মাঠটাও বেড়ে তেপান্তর। আর কী রঙ ফুলের, কী সুবাস! মনটা কেমন করে ওঠে। এমন দিনে কোন বোকাটা পড়ে পড়ে ঘুমায় ঘরে।
৫.
আবার জুটল এসে হারিয়ে যাওয়া হলুদবিবি। বলে পিছু নিয়েছ ফিস দিয়েছ?
ভারি রাগ হয় নোটনের। তবু কী করবে, নতুন জায়গা, চুপ মেরে থাকে। আমাকে ঠাট্টা করে আর কী হবে! হলুদবিবির তখন সুর পাল্টায় সঙ্গে গেলে মধু মেলে
গায়, নাচে আর খুব আদর মাখিয়ে হাসে। নোটনের রাগ পড়ে যায়।
এমন দিনে কত আর রাগ করে থাকতে পারে মানুষ।
৬.
নোটন কি উড়ছে? ও টের পায় না।
কিন্তু হলুদবিবির সাথে তাল মিলিয়েই চলছে ও। ফুলের পাপড়িতে বসছে নোটন কী অবাক কান্ড, ফুল যেমন ছিল তেমনই রয়েছে। ফুলের মধু খেতে এত মজা! আর কত ফুল, কত রকমের সুগন্ধ। খেয়ে আকুল নোটন। হলুদ বলে, কেমন সুন্দর, না!
নোটন অবাক গলায় বলে, সুন্দর মানে, এ যে অবাক করা সুন্দর।
আর তুনি হলুদ চোখ রাঙিয়ে চেঁচিয়ে বলে, সুন্দর তো অমন করে পিছু নাও কেন, ধরে মার কেন?
ও মা সব কোথায় ওতপেতে ছিল বুঝি, হলুদের শাসানি দেখেশুনে নোটন তো কাঁদো কাঁদো।
৭.
ওকে ঘিরে ওখানেই প্রজাপতিদের সভা বসে যায়। কিন্তু আর নালিশ করে না। মাথা গরম না প্রজাপতিদের। সবার কথা মিলে একটা কথাই শাব্যস্ত হয়-মানুষের শিশুদের শেখানো হোক, প্রজাপতি ওদের বন্ধু, ওদের খেলার সাথী।
সব খেলার মতো এ খেলারও নিয়ম থাকবে। একটা নিয়ম মানলেই ওরা খুশি। নোটন ভয়ে ভয়ে বলে, কী নিয়ম?
বুড়ো নীল-হলুদ-লাল পাখার প্রজাপতি বলে,
মোদের ডানা
ধরতে মানা।
কেন কেন কেন?
ধরলে টিপে
নষ্ট হবে
ডানা ও প্রাণ
ধাঁই কুর কুর ধান।
৮.
ঘুম ভাঙতে মা বলেন, তুই কিরে বারান্দায় পড়ে পড়ে ঘুমোলি?
নোটন বোকা হেসে চোখ কচলে বলে, তাই বুঝি!
তা না তো আবার কী?
নোটনের হঠাৎ যেন কী মনে পড়ে, ধরতে মানা ... ধাঁই ... কুর কুর ধান ...। কী যেন আর । কী যেন ...।
মা বুঝে লজ্জা পাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সরে যান। নোটন জানালায় দাঁড়িয়ে ছড়াটা মনে আনতে চায়। অমনি চোখ যায় বাইরে। রোদ-ছায়ার সাথে প্রজাপতিদের খেলা বড় জমেছে।
ছড়া ফেলে রোদছায়া আর প্রজাপতির সাথে খেলতে নোটন চোঁ মেরে কাপভর্তি দুধ খেয়ে মাঠে নেমে আসে।