অনেক আগের ঘটনা। তখন মানুষ বিশ্বাস করত চাঁদ হলো সূর্যের বউ। একদিন সূর্য ও চাঁদ আকাশ ভ্রমণে বের হলো। তখন চাঁদের পেটে একটি বাচ্চা ছিল। চাঁদ খুব আনন্দিত। আকাশে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যকে সে কথা বলে দিল চাঁদ।
কিন্তু, চাঁদের কথাতে একটুও খুশি হলো না সূর্য। গোমড়া মুখ করে থাকল সূর্য। চাঁদ জানতে চাইল, ‘তুমি খুশি হলে না কেন?’ সূর্য বলল, ‘আমি খুশি না। কারণ, আমার ভয় হচ্ছে যদি আমাদের মেয়ে হয়।’
চাঁদ বলল, ‘তাতে ভয়ের কী আছে। আমাদের একটি ফুটফুটে মেয়ে থাকবে। এটা তো অনেক মজার হবে।’সূর্য উত্তর দিল, ‘কিন্তু, মেয়ে হলে তো কখনো আমার মতো হবে না। তাই যদি মেয়ে হলে আমরা তাকে মেরে ফেলব। কারণ একটি ছেলে দরকার। সেই ছেলে হবে আমার মতো শক্তিশালী।’
সূর্যের কথা শুনে চাঁদ খুব কষ্ট পেল। বন্ধুরা সেদিন বাচ্চা নিয়ে চাঁদ ও সূর্যের খুব ঝগড়া হয়।
তারপর এক মাস পেরিয়ে গেল। সূর্য অন্য একটি শহরে বেড়াতে গেল। চাঁদকে সঙ্গে নিল না। তবে, তার ঠিক তিন দিন পর চাঁদের সন্তান জন্ম নিল। তাও একটি মেয়ে। ফুটফুটে চাঁদের মতো মেয়ে। কিন্তু, চাঁদ তো খুব ভয় পেয়ে গেল। কারণ, সূর্য জানতে পারলে মেয়েটিকে মেরে ফেলবে। চাঁদ মেয়েটিকে বাঁচাতে একটি বুদ্ধি করল। সে ফুটফুটে মেয়েটিকে একটি বাক্সে লুকিয়ে রাখল।
কয়েক দিন পর সূর্য বাড়ি ফিরে এলো। আসার পথে সে জানতে পেরেছে চাঁদের একটি মেয়ে হয়েছে। তাই বাড়িতে ফিরেই মেয়ে কোথায় আছে জানতে চাইল সূর্য।
কিন্তু চাঁদ বলল, ‘আমার একটি মেয়ে হয়েছিল। আমি গতকাল তাকে মেরে ফেলেছি।’
সূর্য চাঁদের কথা বিশ্বাস করল না। কারণ, সূর্য জানে চাঁদের মনটা খুব নরম। তাই কাউকে মেরে ফেলার মতো সাহস চাঁদের নেই। সূর্য কী করল জানো? সারা বাড়িতে মেয়েটিকে খুঁজতে শুরু করল। একসময় কাপড়ের বাক্সে পেয়েও গেল।
চাঁদ মিথ্যা বলেছে, সূর্য রাগে গজগজ করছে। সে এতটাই রেগে গিয়েছিল যে মেয়েটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলল। তারপর জানালা দিয়ে টুকরোগুলো ছুড়ে ফেলে দিল।
তারপর কী হয়েছিল জানো। সূর্যের ফেলে দেওয়া টুকরোগুলো তারা হয়ে চাঁদের পাশে জ্বলতে শুরু করে। কারণ মেয়েটি মা’কে ছেড়ে যেতে চাইনি। এভাবেই আকাশে জন্ম নিল হাজার হাজার তারা।
সেদিন সূর্য ও চাঁদের এ নিয়ে অনেক ঝগড়া হয়েছিল। তারা আলাদা হয়ে গেল। তখন থেকে সূর্য দিনের বেলা ও চাঁদ রাতের বেলা ওঠে। আর রাতে যখন চাঁদ ওঠে তখন সেই টুকরোগুলো তাদের মা’কে আলোকিত করতে চারপাশে জ্বলে ওঠে।
(আফ্রিকার লোককাহিনি অবলম্বনে লেখা)