শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেয়াল রাজা ও সিংহ

নূর মোহাম্মদ দীন

শেয়াল রাজা ও সিংহ

শেয়ালটি ছিল অনেক চালাক। চলনে-গড়নে দেখতে অন্য শেয়ালদের মতো হলেও নিজেকে অনেক বড় ভাবত। ক্ষমতাশালী মনে করত। অনেক অহংকার দেখাত। শেয়ালদের রাজা মনে করত। এক সময় নিজেকে বনের রাজা বলে দাবি করতে লাগল। বনের অন্য শেয়ালদের কোনো পাত্তাই দিত না। এমনকি কোনো পশুপাখিকেও। কোনো শেয়াল যদি তার কথার অবাধ্য হতো তাহলে তাকে শাস্তি দিত। বন থেকে বের করে দিত। গেরস্থের খোঁয়াড়ের মুরগি, ছাগলের বাচ্চা, ভেড়ার বাচ্চা শিকার এনে দিতে বাধ্য করত। আর শেয়াল রাজার হালে বসে বসে মজা করে খেতো। কারও মনে কোনো শান্তি ছিল না।

একদিন শেয়াল বনের সব শেয়ালকে ডেকে বলল, ‘আমি কিন্তু তোমাদের মতো কোনো  সাধারণ শেয়াল নই। আমি তোমাদের চেয়ে অনেক জ্ঞানী আর বুদ্ধিমান বলেই এই বনের রাজা হয়েছি। আমিই এই বনকে টিকিয়ে রেখেছি। আমার চেয়ে ক্ষমতাশালী আর বুদ্ধিমান পশু কে আছে এই বনে, বল? আমি হলাম এই বনের রাজা। আমাকে রাজা বলে মান না এমন কে কে আছ হাত তোলো।’

শেয়ালটি ছিল অত্যাচারী ও দুষ্ট। তাই অন্য শেয়ালরা ভয়ে কেউ হাত তুলল না। মাথা নিচু করে চুপ করে রইল। কিছু বলতে চেয়েও পারল না।

শেয়াল নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা দিল এবং বলল, ‘কাল থেকে তোমরা আমার জন্য একটা করে টাটকা মুরগি আর ছাগলের কচি বাচ্চা ধরে নিয়ে আসবে। কারণ, আমি হলাম তোমাদের রাজা। মানে এই বনের রাজা। কাল থেকে আমি প্রাসাদে বসে রাজভোগ খাব। যাও যাও কাল সবাই একটা করে মুরগি, ছাগল, ভেড়ার বাচ্চার শিকার নিয়ে আসবে। তা না হলে আমার এই রাজ্যে কেউ থাকতে পারবে না।’

শেয়ালের কথা শুনে অন্য শেয়ালরা মনে মনে খুব রাগ হলো। কিন্তু কিছু বলতে পারল না।

‘ঠিক আছে তাই হবে।’

এই বলে বনের সব শেয়াল ওইদিন রাতে কাশবনে একত্রিত হলো। সবাই একটি বুদ্ধি বের করল-কীভাবে ধূর্ত শেয়ালের রাজাগিরি ছুটানো যায়। কীভাবে উচিত শিক্ষা দেওয়া যায়।

সবাই বলল, ‘শেয়ালকে কেন আমরা বনের রাজা মানব? ও আমাদের ধোঁকা দিচ্ছে। বোকা  বানাচ্ছে। অত্যাচার করছে। বনের রাজা হলো সিংহ। চলো আমরা সবাই সিংহের কাছে নালিশ দিই। সিংহকে বলি, শেয়াল আপনাকে অপমান করছে। শেয়াল নিজেকে বনের রাজা বলে দাবি করছে।’

পরদিন এক সঙ্গে সব শেয়াল গেল সিংহের বাড়িতে। সিংহকে সব ঘটনা খুলে বলল। সিংহ তো শুনে রেগেমেগে আগুন! ‘কী এত্ত বড় সাহস! যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা! শেয়ালের বাচ্চা শেয়াল! তুই নাকি বনের রাজা? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা। তোর রাজাগিরি ছুটাচ্ছি।’

পরদিন সিংহ বনের সব পশুপাখিকে নিয়ে সালিশ বসল।

ধূর্ত শেয়ালকেও ডাকা হলো।

সিংহ শেয়ালকে জিজ্ঞেস করল, ‘কীরে শেয়ালের বাচ্চা শেল্টু, তুই নাকি এই বনের রাজা? তুই নাকি আমাকে অপমান করিস? আমাকে রাজা বলে মানিস না। তুই যদি বনের রাজা হস তাহলে সিংহের মতো একটা হুংকার দিয়ে দেখা তো?’

শেয়াল ছিল খুব চালাক। অবস্থা বেগতিক দেখে শেয়াল খুব আকুতি মিনতি করে সিংহকে বলল, ‘না না আজ্ঞে রাজা মশাই, আমি কেন রাজা হতে যাব? ওরা মিথ্যে বলছে। আমার গলায় ভীষণ ঠান্ডা লেগেছে। কয়েক দিন থেকে ঠান্ডায় ঠিকমতো কথা পর্যন্ত বলতে পারছি না। ঠিক মতো খেতেও পারছি না। না খেয়ে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আজকের জন্য আমায় মাফ করা যায় না, রাজা মশাই। কাল না হয় আমি বনের সবাইকে হুংকার দিয়ে শোনাব।’

সিংহ বলল, ‘ঠিক আছে আজকের জন্য তোকে মাফ করে দিলাম। কাল সকালে সবার সামনে আমার মতো হুংকার ডাকবি। তাহলে তোকে সবাই রাজা বলে মানব আমরা। আর তা না হলে তোকে  আস্ত খেয়ে ফেলব আমি।’

দূর্ত শেয়াল ওইদিন কোনো মতে জীবন বাঁচিয়ে বন ছেড়ে পালিয়ে গেল। এরপর ধূর্ত শেয়াল রাজাকে আর কোনো দিনও বনে খুঁজে পাওয়া গেল না।

তারপর বনের সবার মনে শান্তি ফিরে এলো। সব পশুপাখি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর