শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
গল্প

শীতের সকালে মামাবাড়ি

রণজিৎ সরকার

শীতের সকালে মামাবাড়ি

নিসফি মামাবাড়িতে এসেছে। খোকশাহাট গ্রামে। শীতের সকালে মামার সঙ্গে বের হলো নিসফি। খেজুর গাছে নিচে এসে দাঁড়াল মামা ভাগনি। রস সংগ্রহকারী গাছি হাঁড়ি গাছ থেকে নামালেন। নিসফি দ্রুত দুই গ্লাস রস খেয়ে ফেলল। পাশের একটা গাছের দিকে তাকাল ও। দেখতে পেল একটা ছেলে খেজুর গাছে। ও চুঁইয়ে পড়া ফোঁটা ফোঁটা রস হা করে খাচ্ছে। রস খাওয়ার দৃশ্যটা দেখে মজা পেয়ে কয়েকটা ছবি তুলল নিসফি।

তারপর মামার সঙ্গে হেঁটে যেতে লাগল। কিছু দূর যাওয়ার পর শর্ষে খেত দেখল। খেতে অনেক শর্ষে ফুল। মামাকে বলে শর্ষে খেতের পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুলল।

খেতে থেকে উঠল রাস্তায়। এসেই দেখে শীতের সবজি নিয়ে কয়েকজন বাজারে যাচ্ছে। নিসফি সব সবজি চেনে না। তাই মামাকে বলল, ‘মামা, কী নিয়ে যাচ্ছে বাজারে?’

মামা বললেন, ‘ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম আর বেগুন।’

‘মামা, ফুলকপি আর বাঁধাকপির গাছ দেখার খুব ইচ্ছা।’

‘চলো তাহলে। কিছু দূর গেলেই ফুলকপি আর বাঁধাকপির খেত দেখতে পাব।’

‘চলো।’

মামা ভাগনি এগিয়ে যেতে লাগল। কিছু দূর যেতেই দেখে কয়েকজন কিশোর খেতের ভিতর খড়কুটা পুড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছে। নিসফি দেখে এগিয়ে গেল। মামা সাবধান করে দিলেন দূর থেকে আগুন পোহাতে হবে। ওদের সঙ্গে গল্পে গল্পে আগুন পোহাতে লাগল ও। আগুন পোহানো শেষ হলো। তারপর পাশের কপি খেতে যেতে দেখে রাস্তার পাশে বোরো খেতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাম্পের সাহায্যে সেচ দিচ্ছেন কৃষক। পানি পড়া দেখতে লাগল নিসফি। ধান খেতের পাশ দিয়ে যেতে দেখে একটি গাছে মাকড়সার জালের মতো জমে আছে শিশির। পাশেই দেখে ধানের পাতাতে সকালের শিশির বিন্দু পড়ে আছে। তারপর এগিয়ে গেল ফুলকপি ও বাঁধাকপির খেতের দিকে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি দেখে খুব খুশি হয়ে ছবি তুলল নিসফি।

মামা এবার বললেন, ‘নিসফি, তোমাকে এবার একটা জিনিস দেখাতে নিয়ে যাব।’

‘কী জিনিস মামা। কোথায় নিয়ে যাবে?’

‘আগে আমার সঙ্গে চলো।’

মামাকে আর প্রশ্ন না করে খুব আগ্রহ নিয়ে নিসফি এগিয়ে গেল। একটা পুুকুরের পাড়ে গেল। দেখে অতিথি পাখির কলতান। কিছু সময় পর পুকুরের ভিতর পাখিগুলো উড়তে লাগল।

পুকুর পাড় থেকে রাস্তায় এসে দেখে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী স্কুলে যাচ্ছে। ওদের দেখে মামাকে বলল, ‘মামা, আমি একটু ওদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তুমি কি পরিচয় করে দেবে। ওদের সঙ্গে।’

মামা সঙ্গে সঙ্গে ডাক দিলেন ওদের। ওরা দাঁড়িয়ে গেল। মামা নিসফির সঙ্গে পরিচয় করে দিলেন। তারপর নিসফি বলল, ‘তোমরা দলবেঁধে স্কুলে যাচ্ছ। শীতের সকালে কি সুন্দর দেখা যাচ্ছে। তোমাদের সঙ্গে একটা সেলফি তুলি।’

সেলফি তোলার কথা শুনি ওরাও খুশি হয়ে গেল। তারপর সেলফি তুলল। ওরা স্কুলের দিকে যেতে লাগল। নিসফি মামার সঙ্গে বাসায় আসতে লাগল। কিছু দূর আসার পর দেখে কুয়াশার ভিতর এক কৃষক জমিতে আগাছা পরিষ্কার করছেন।

দাঁড়িয়ে থেকে দেখে বাড়ির দিকে যেতে লাগল। পথে একটা বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা। বৃদ্ধাটি শীতে কাঁপছেন। বৃদ্ধাটার শীতের কষ্ট দেখে নিসফি তার শরীরে রাখা চাদরটা তাকে দিয়ে দিল। বৃদ্ধা চাদর পেয়ে খুশি হয়ে মাথায় হাত দিয়ে নিসফিকে দোয়া করলেন।

কিছু দূর আসার পর রাস্তায় দেখে একটা কুকুরের বাচ্চা শীতে কাঁপছে। নিসফি বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিল। ওর কোলে থেকে মামা নিতে চাইলেন। নিসফি বাচ্চাটাকে না দিয়ে নিজে জড়িয়ে ধরল। তারপর গ্রাম দেখা শেষ করে মামাবাড়িতে এলো। মামাবাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে এসে বাচ্চাটাকে আদর যত্ন করে লালনপালন করতে লাগল নিসফি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর