শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
গল্প

সোনালি হাঁসের রুপালি রহস্য

সারমিন ইসলাম রত্না

সোনালি হাঁসের রুপালি রহস্য

রাজা সারফারাজ রাজ্য চালাতে চালাতে গিয়ে অস্থির হয়ে উঠলেন। হঠাৎ একদিন ইচ্ছা হলো বিকালবেলা ঘুরে বেড়াবেন। রাজ্য দেখে রাজা আনন্দিত। বুকভরে শ্বাস নিয়ে বললেন, কতদিন পর রাজ্য পরিদর্শনে বের হলাম। একটি নীল সরোবর দেখে রাজা মুগ্ধ হলেন। ঘোড়া থেকে নেমে সরোবরের পাশে বসলেন। রাজা বললেন, আমি এখানে একা সময় কাটাতে চাই। প্রহরীরা চলে গেল। সোনালি সাতটি হাঁস নীল সরোবরে খেলা করছে। প্রহরীরা কিছুক্ষণ পর এসে রাজাকে স্মরণ করিয়ে দিল ফিরে যাওয়ার কথা। রাজা ঘোড়ায় ওঠে বসলেন। আর বললেন, ওই অপূর্ব সাতটি হাঁস আমাদের সঙ্গে নিয়ে চল। এমন সুন্দর হাঁসগুলো রাজবাগানের সরোবরে সাঁতার কাটবে। রাজবাগানের সরোবরে হাঁসগুলো ছেড়ে দেওয়া হলো। ওমনি ঘটলো অদ্ভুত ব্যাপার! সোনালি সাতটি হাঁস একেক করে হয়ে গেল রুপালি হাঁস। রাজা বিস্ময়ে হতবাক! তিনি চিন্তিত হলেন। রাজার বিচক্ষণ উজির নাজির বললেন, জাঁহাপনা, আমাদের মনে হয় হাঁসগুলো সেই নীল সরোবরে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তৎক্ষণাৎ রুপালি হাঁসগুলো সেই নীল সরোবরে ছেড়ে দেওয়া হলো। রুপালি হাঁসগুলো নীল সরোবরে খেলা করতে করতে সোনালি রং ধারণ করল।

রাজ রক্ষীরা ভয়ে রাজার কাছে ছুটে এলো। জাঁহাপনা, হাঁসগুলো আবারও সোনালি হয়ে গেছে। রাজা আরও চিন্তায় ডুবে গেলেন। রাজ্যে কি কোনো অমঙ্গল হতে যাচ্ছে? রাজা হুকুম করলেন রাজ্যে ঘোষণা করে দাও, যে সোনালি হাঁসের রুপালি রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে তাকে ওই সাতটি হাঁস পুরস্কার দেওয়া হবে। ঢাকঢোল বাজিয়ে ঘোষণা করা হলো? তবু হাঁসের রহস্য উদ্ঘাটন করতে কেউ এগিয়ে এলো না। রাজা হুকুম করলেন। সোনালি হাঁসগুলো রাজবাগানে ছেড়ে দেওয়া হোক। হাঁস ৭টি পুনরায় রাজবাগানে ছেড়ে দেওয়া হলো। রাজ সরোবরের পানি হাঁসগুলোর শরীরে লাগতেই সোনালি থেকে রুপালি হয়ে গেল। রাজা এ দৃশ্য দেখে ভীষণ রেগে গেলেন। বললেন, হাঁসগুলোকে খাবার দেবে না। হাঁসগুলো না খেতে পেয়ে কাঁদতে শুরু করল।

রাজা সিংহাসনে বসে আছেন। এমন সময় প্রহরী এসে বলল, জাঁহাপনা, একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে। রাজা নিয়ে আসার হুকুম করলেন। রাজার সামনে হাজির করা হলো এক অচেনা বৃদ্ধা। অচেনা বৃদ্ধা বিনয়ের সঙ্গে বলল, জাঁহাপনা, আমি কিছু কথা বলব অনুমতি দিন এবং আমার কথাগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রাজা বললেন, অনুমতি দেওয়া হলো। আর অবশ্যই তোমার কথাগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা হবে। বৃদ্ধা বলল, জাঁহাপনা, আজ থেকে ১২ বছর আগে এক দুখিনী কৃষাণীর কাছে আপনি খাজনা পেতেন। কিন্তু সে খাজনা দিতে পারেনি। কৃষাণী খাজনা মওকুফের জন্য আপনার কাছে নিবেদন করে। আপনি তার নিবেদন গ্রহণ করেননি। উল্টো তার জমিটুকু দখল করে নিয়েছিলেন। রাজা সারফারাজ প্রচণ্ড রেগে গেলেন। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, তারপর? অচেনা বৃদ্ধা বলল, সেই দখলকৃত জমিটি আপনি মুক্ত করে দিন এবং সেখানে একটি বাড়ি তৈরি করুন। সেই বাড়িতে সোনালি ৭টি হাঁস রেখে দিন। রাজা বললেন, তাহলে কি সোনালি হাঁসের রুপালি রহস্য উদ্ঘাটন হবে? বৃদ্ধা বলল, রহস্য উদ্ঘাটন হবে কি না বলতে পারি না। তবে আপনি অবশ্যই হাঁস সম্পর্কে জানতে পারবেন। বৃদ্ধাকে বন্দি করা হলো। রাজার নির্দেশে দখলকৃত জমিটি মুক্ত করা হলো। জমিতে সুন্দর একটি বাড়ি তৈরি করা হলো। সেই বাড়িতে সোনালি ৭টি হাঁস নিয়ে যাওয়া হলো এবং কড়া পাহারায় রাখা হলো।

ভোরের আলো ফুটলো। রাজঘণ্টা বেজে উঠল। রাজা বিস্ময় চমকে উঠলেন! এ রাজঘণ্টা বাজার তখনই নির্দেশ যখন রাজ্যের অশুভ কিছু ঘটবে। রাজা সিংহাসনে দ্রুত উপস্থিত হলেন। রাজ প্রাসাদের দরজা খুলে দেওয়া হলো। রাজ কর্মচারীরা ছুটে এলো। বিশ্বস্ত এক প্রহরী বলল, জাঁহাপনা, আমরা সেই বাড়ির ভিতর থেকে মানুষের কথা শুনতে পাচ্ছি। রাজা বললেন, এক্ষুণি দরজা খুলে দাও। রাজার হুকুমে সেই বাড়ির দরজা খুলে দেওয়া হলো। বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো সুন্দর ৭টি পুত্র। অচেনা বৃদ্ধাকে রাজ দরবারে আনা হলো। রাজা বললেন, তুমি কি কোনো জাদুকরী? বৃদ্ধা মাথা নিচু করে বলল, ক্ষমা করুন, জাঁহাপনা। আমি কোনো জাদুকরী নই। রাজা বললেন, তাহলে বল কী করে সেই সোনালি ৭টি হাঁস ৭ পুত্রতে পরিণত হলো? বৃদ্ধা বলল, জাঁহাপনা, কী করে সোনালি ৭টি হাঁস ৭টি পুত্রতে পরিণত হলো সেটা আমি জানি না। তবে আমি আপনাকে বলছি, ১২ বছর আগে আপনি যার জমি দখল করে নিয়েছিলেন আমি সেই কৃষাণী।

আমার সাতটি পুত্রকে নিয়ে আমি দুঃখে দিনযাপন করছিলাম এবং প্রতিদিন ঘুমানোর আগে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করতাম, হে স্রষ্টা, আপনি এমন কিছু করুন যেন আমাদের জমি ফিরে পাই। আর আমার পুত্ররা যেন সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে। একদিন সকালে দেখি আশ্চর্যজনকভাবে আমার সাতটি পুত্র সোনালি ৭টি হাঁস হয়ে গেছে। আমি তাদের নীল সরোবরে ছেড়ে দেই। আপনার রাজ সরোবরে তাদের যখন ছেড়ে দিলেন তারা সোনালি হাঁস থেকে রুপালি হাঁসে পরিণত হলো। কিন্তু কেন পরিণত হলো সেটা আমি বলতে পারি না। তবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এতটুকু বুঝি তারা আপনার রাজ সরোবরে অবস্থান করতে চায়নি। রাজা কথাগুলো অবাক হয়ে শুনলেন! রাজা হাতজোড় করে বললেন, হে দুখিনী মা, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। রাজ্যের অনেকের জমি আমি দখল করে নিয়েছি। আজ থেকে কথা দিচ্ছি এমন কাজ আর কখনো করব না। দুখিনী কৃষাণী বলল, জাঁহাপনা, আপনি ক্ষমা চাইবার আগেই আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

সর্বশেষ খবর