শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
গল্প

জাদুবনে চাঁদপরি

সারমিন ইসলাম রত্না

জাদুবনে চাঁদপরি

চাঁদপরি বাগানে খেলতে খেলতে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেল। সব পরিরা হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বলল, কেন যে আমাদের সঙ্গে খেলতে আসো। প্রজাপতি পরি তার রঙিন ডানা মেলে দিয়ে বলল, আমি কত সুন্দর। সবাই আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। আর তোমাকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। চাঁদপরি কাঁদতে লাগলো। সব পরিরা  হাসতে হাসতে বলল, ছিচ কাঁদুনে পরি কোথাকার।

চাঁদপরি ছুটে এলো। পরি কক্ষের দরজায় টোকা দিলো। রুপালি পরি স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করছেন। চাঁদপরি  কাতর কণ্ঠে বললো, দরজা খুলে দাও মা। আমি তোমার চাঁদপরি। রুপালি পরি  কিছুটা রেগেই দরজা খুললেন। কিন্তু চাঁদপরির চোখে অশ্রু দেখে তিনি ব্যথিত হলেন। চাঁদপরিকে বুকে টেনে জানতে চাইলেন, কী হয়েছে? অমন করে কাদঁছো কেন? চাঁদপরি বলল, মা, সব পরিরা বলে আমি দেখতে খারাপ। আমি দেখতে কেমন খারাপ জানতে চাই। দয়া করে আমাকে আয়না দেখাও। রুপালি পরি শান্ত স্বরে বললেন, ওরা তোমার সঙ্গে ঈর্ষা করে। কারণ তুমি পরিরানির মেয়ে। তুমি আমার মেয়ে। আমি তোমাকে কী করে আয়না দেখাবো? এই পরি রাজ্যে কোনো আয়না নেই। চাঁদপরি রাগী স্বরে বলল, আয়না ছাড়া পরির রাজ্য হয় নাকি? দয়া করে আয়না বের করো। হঠাৎ বিজলী চমকালো। রূপালি পরির চোখ ভিজে উঠলো। মা, তুমি কাঁদছো কেন? রুপালি পরি ইশারায় বললেন, আমি বাকশক্তি হারিয়েছি। চাঁদপরি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, মা, তুমি অভিনয় করতে থাকো। আমি গেলাম।

চাঁদপরি রাজ্যময় আয়না খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে জাদুবনে প্রবেশ করল। জাদুবনের সৌন্দর্য দেখে চাঁদপরি বিস্ময় হতবাক! গাছের পাতা সবুজ হয় কিন্তু জাদুবনের গাছের পাতা নীল। গাছের ডালগুলো সোনালী। জাদুবনের ফুল আর ফল সূর্যের মতো ঝলমলে। চাঁদপরি মুগ্ধ চোখে চারদিক দেখতে দেখতে এগোতে থাকলো। রাজকন্যা চাঁদপরিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একদল পরি সৈন্য চাঁদপরিকে খুঁজতে বের হলো। এক ঝাঁক পাখি তাদের উদ্দেশ্যে বলল, রাজকন্যা চাঁদপরি এখন জাদু বনে আছে। ওখানে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। আর প্রবেশ করলেই সে নীল জাদু গাছ হয়ে যাবে। অতএব ফিরে যাও।

বিশাল আকৃতির একটি প্রজাপতি আয়না নদী তৈরি করলো। চাঁদপরি আয়না খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে গেল। একটি নদীর তীরে বসলো। নদীর দিকে তাকিয়ে চাঁদপরি বিস্ময়ে হতবাক!  আমি দেখতে এত সুন্দর! এমন মিথ্যে কথা মা কী করে আমার সঙ্গে বলল! এই আয়না আমি নিয়ে যাবো। চাঁদপরি নদীর জলে ঝাঁপ দিলো। ছলাৎ ছলাৎ শব্দে যাদুপ্রাসাদ দুলে উঠলো। জাদুকর সূর্য সম্ভাষণ জানালো, এসো চাঁদপরি এসো। চাঁদপরি অবাক হয়ে বলল, হে সুদর্শন যুবক, কে আপনি? কী করে জানলেন আমার নাম? জাদুকর সূর্য বলল, তোমার নাম আমি জন্ম জন্মান্তর থেকেই জানি। কারণ তুমি আমার রানি চাঁদপরি। আর আমি তোমার রাজা সূর্য।

চাঁদপরি জাদুকর সূর্যের হাতে হাত রাখল। ওমনি পরি রাজ্যে আর্তনাদ শুরু হলো। চাঁদপরি সিংহাসনে বসে বলল, আজ থেকে আমি তোমাদের পরি রাজ্যের পরি রানি। আর আমার সেনাপতি মহামান্য সূর্য রাজ। তোমরা সবাই আমাদের মান্য করবে। কারণ বাকরুদ্ধ পরি রানি রাজ্য চালাতে পারবেন না।  হঠাৎ মিষ্টি বাতাস বয়ে গেল। সেই বাতাসে রাজ্যের সবাই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। কেউ প্রতিবাদ করতে পারল না।

চাঁদপরি হাসতে হাসতে বলল, আমি কুৎসিত বলে যারা আমাকে কাঁদিয়েছিলে তাকিয়ে দেখো আমি কত সুন্দর। চাঁদপরির হুকুমে অপরাধী পরিরা কারাবন্দি হলো। চাঁদপরি তার মা পরি রানিকেও কারাবন্দি করলো।

শুরু হলো রাজকন্যা চাঁদপরি আর জাদুকর সূর্যের নতুন গল্প। রাজকন্যা চাঁদপরি রাজ্য চালায় আর জাদুকর সূর্য তার জাদু মায়া প্রয়োগ করে। রাজকন্যা চাঁদপরি রাজ্য চালাতে চালাতে অস্থির হয়ে  বলল, প্রিয় সূর্য রাজ, আপনি সিংহাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করুন। কারণ রাজ্য চালাতে গেলে আমার সৌন্দর্য হানি হবে। সূর্য রাজ হাসিমুখে সিংহাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এদিকে রাজকন্যা চাঁদপরি তার সৌন্দর্য চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সব পরিরা সকাল সন্ধ্যা চাঁদপরির প্রশংসা করে।  চাঁদপরি বলল, তোমাদের প্রশংসা অনেক শুনেছি। অন্যান্য পরি রাজ্যে খবর পাঠানো হলো। কিন্তু কেউই চাঁদপরির প্রশংসা করতে এলো না।

চাঁদপরি সারাদিন বিরবির করে। আমি নতুন কারো প্রশংসা শুনতে চাই। জাদুকর সূর্য রুঢ় কণ্ঠে বলল, পাগল রানি দিয়ে  রাজ্য চলবে না। অতঃপর রাজকন্যা চাঁদপরিকে কারাবন্দি করা হলো।

রাজকন্যা চাঁদপরি কাঁদতে শুরু করল। কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টিশক্তি হারালো। চাঁদপরি আর্তনাদ করে উঠল, মা, তুমি কোথায়? হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। পরি রানি রূপালী আনন্দে চেচিঁয়ে উঠলেন। আমি বাকশক্তি ফিরে পেয়েছি। পরি রানি স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। পবিত্র বৃষ্টির দমকা হাওয়ায় জাদু কারাগার ভেঙে গেল। পরি রানি রুপালি মুক্ত হলেন। রাজ্যের সব জাদু মায়া বৃষ্টিতে ধুয়ে গেল।

পরি সৈন্যদল জাদুকর সূর্যকে বন্দি করল। চাঁদপরির কান্না কিছুতেই যেন থামছে না। পরিরানি রুপালিও কাঁদতে শুরু করলেন। মায়ের দু'ফোটা চোখের জল চাঁদপরির চোখের উপর পড়লো। ওমনি চাঁদপরি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। মা'কে জড়িয়ে ধরল। চাঁদপরি বলল, মা, আমাকে ক্ষমা করে দাও। পরি রানি রূপালী বললেন, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। সোনা মেয়ে আমার, তুমি যখন জন্মেছিলে চাঁদের মতো রূপ নিয়ে জন্মেছিলে। মানুষ অথবা পরি কেউই ভবিষ্যৎ বলতে পারে না। জানতেও পারে না। এটা শুধুমাত্র স্রষ্টার অধিকার। তবে আমি এতটুকু          জানতাম তুমি যদি আয়নায় নিজেকে দেখো তাহলে প্রচ- অহংকারী হয়ে উঠবে। পরি রাজ্যে অনিষ্ট হবে। তাই তোমার জন্মের পর রাজ্যের সব আয়না বিলুপ্ত করে দিয়েছিলাম।  আর পরি রাজ্যের সবার চোখে মায়া করে রেখেছিলাম। যেন সবাই তোমাকে কুৎসিত দৃষ্টিতে দেখে। মা সর্বদা সন্তানের মঙ্গল চায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর