মা দেখ, ছোট্ট বিড়ালটি পাশের বাসার সানসেটের ওপরে কেমন করে বসে আছে। এখনই পড়ে যাবে। ওকে রক্ষা করতে হবে। চল তাকে নিয়ে আসি।

আকাশজুড়ে সূর্যটা গোধূলির লাল আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে যেন পটে আঁকা ছবি। সানজিদা সারাদিন অফিস শেষে বাড়ি ফিরে এসেছে। খুব কান্ত। এরপরও হাসিমুখে পাঁচ বছরের অনন্তকে বলল, ‘ওই সুন্দর বিড়ালটির জন্য আমি কী করতে পারি বাবা।’

-বাসায় গ্যালেনা নামের একটি বিড়াল আছে আর বাসার বাইরে আরও তিনটি বিড়ালকে তুমি প্রতিদিন খাবার দাও। সবগুলোকে আদর-যত্ন দিয়ে কাছে টানতে পারবে।

-মা বিড়ালরা বাসায় থাকতে পছন্দ করে। ওরা আমার আদর পেতে চায়। তাই আমরা সবাই মিলে ওদের আদর- যত্ন করব।

-ঠিক আছে অনন্ত, নিয়ে আসব।

অনন্তের দাদির নামটি ভারি মিষ্টি। তার নাম লাবণ্য প্রভা। তিনি দেখতেও খুব সুন্দর। কিন্তু দাদির বয়স হয়েছে, তার শরীর ভালো না। অনন্তের মা তার শাশুড়িকে খুব ভালোবাসে। অনন্তের দাদি কাল রাতে খুব বমি করেছেন।

অনন্তের মা, নিজের হাতে সব পরিষ্কার করে এবং দাদিকে সুন্দর একটা শাড়ি পরিয়ে গুছিয়ে নিজের কাছে ঘুম পাড়িয়েছেন। মাঝরাতে ওঠে অনন্ত দাদির এমন বমি করা দেখে মাকে জিজ্ঞেস করল ‘মা, তোমার বুঝি খারাপ লাগে না, এমন নোংরা পরিষ্কার করতে।’

মা বললেন, ‘কেন খারাপ লাগবে, তোমার দাদি তো আমার মা। এক সময় আমিও বুড়ো হয়ে যাব তখন তুমি এভাবে আমার যত্ন করবে। তোমার কি তখন ঘৃণা লাগবে?’

-না মা, তুমি তো আমার মা।

মা হেসে অনন্তের গালে একটি চুমু দেন।

পরের দিন পাশের বাড়িতে গিয়ে খুব কষ্ট করে ছোট বিড়ালছানাকে উদ্ধার করল অনন্ত আর তার মা সানজিদা।

শ্রাবণ মাস কদম ফুল ফুটেছে গাছে গাছে, অনন্তের বাবা তার মায়ের জন্য একশটি কদম ফুল নিয়ে এলো। ফুল দেখে শিশুদের মতো হেসে উঠলেন দাদি। দাদি বললেন, ‘আমি যখন থাকব না। অনন্ত তোমার মায়ের যখন আমার মতো বয়স হবে তখন মায়ের খুব যত্ন নেবে। কখনো অবহেলা করবে না। অনন্তর বাবাকেও বলি, আমার বউমাকে কখনো কষ্ট দিও না।’

মায়ের কথা শুনে বাবা ভারাক্রান্ত মনে বললেন, ‘মা, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি কোনো চিন্তা কর না। দোয়া কর।’

সেদিন রাতে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে দাদি। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়িতে রইলো অনন্ত, গ্যালেনা, মা আর নতুন বিড়াল ঝুমকো লতা। সবাই মিলে দাদির জন্য প্রার্থনা করতে থাকে। তাদের প্রার্থনা শেষে পাঁচ দিন পরে দাদি বাড়ি ফিরে এলেন। ছোট বিড়াল ঝুমকো লতার যেন আনন্দ আর ধরে না। সে লাফিয়ে লাফিয়ে দাদির কাছে চলে যায়।

দুপুরবেলা অনন্ত স্কুল থেকে ফিরে আসে। এসে দেখে ঝুমকো লতা দাদির গা ঘেঁষে ঘুমিয়ে আছে। গরমের এ দুপুরবেলায় চারদিকে সুনসান নীরবতা। কেবল রাস্তা দিয়ে বল্টু মিয়া তার আইসক্রিমের ভ্যানটি নিয়ে যাচ্ছে আর জোরে জোরে চিৎকার করছে ‘আইসক্রিম লাগবে আইসক্রিম।’

বল্টু মিয়ার চিৎকারে দাদির ঘুম ভেঙে গেল।

-দাদাভাই তুমি স্কুল থেকে ফিরেছ, একটা আইসক্রিম খাবে নাকি?

-হ্যাঁ খাব।

-দেখ বালিশের নিচে তোমার মা আমার জন্য টাকা রেখে গেছে। সেখান থেকে নাও।

অনন্ত আইসক্রিম কিনে নিয়ে এলো। সবচেয়ে মজার ঘটনা হলো ঝুমকো লতা আর গ্যালেনা

দাদি আর অনন্তদের সঙ্গে মিলে মজা করে আইসক্রিম খেতে লাগল।