শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জিহাদের ঘুঘুর ছানা

ফারুক আহমেদ জীবন

জিহাদের ঘুঘুর ছানা

জিহাদের বয়স এ বছর আটে পড়েছে। সে এখন প্রাইমারিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। তার ছোট্ট একটা বোন আছে নাম জিমি। জিমির বয়স মাত্র এক বছর। স্কুল, পড়ালেখা, খেলা আর ছোট্ট বোন জিমিকে নিয়ে সারা দিন হৈ-হুল্লোড়, হাসাহাসি, আনন্দ-উল্লাস আর দুষ্টমি করে বেশ সময় কেটে যায় জিহাদের। আর তার সঙ্গী আছে বেশ কিছু পাখপাখালি। জিহাদ আবার ভীষণ পাখি প্রিয়। খুব ভালোবাসে পাখিদের। ময়না, শালিক, বুলবুলি, দোয়েল, পেচা, টুনটুনি, বউকথা কও, হলুদ পাখি, ঘুঘু আর চড়ুই। এসব পাখিই যেন নিত্যদিন জিহাদের মনে আনন্দ জোগানোর সাথী। বলা যায়, পাখি বলতে জিহাদ অজ্ঞান। প্রতিটা দিন ভোরে জিহাদের ঘুম ভাঙে দোয়েলের মিষ্টি মধুর সুর শুনে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা পাখির কিচিরমিচির শব্দে বাড়িজুড়ে যেন এক অন্য রকম কলরবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জিহাদদের বসতবাড়ি আর বাড়ির চারপাশে ছোট-বড় বিভিন্ন বৃক্ষে এসব পাখি বাসা বেঁধে থাকে। জিহাদদের বাড়ির পরিবেশটা দেখতে লাগে ঠিক যেন ছায়া মোড়ানো ছোটখাটো একটা সবুজের অরণ্য ভূমি।

প্রতিবছর জিহাদের আব্বু নানান রকম প্রজাতির ফল ও ঔষধি গাছ বাজার থেকে কিনে বাড়ির আশপাশে রোপণ করে। এক দিন জিহাদ জিজ্ঞাসা করল আচ্ছা আব্বু তুমি এত গাছ লাগাও কেন?

উত্তরে জিহাদের আব্বু জীবন বলল, এসব গাছ যে আমাদের পরম বন্ধু বাবা। জিহাদ বলল, গাছ আমাদের বন্ধু কীভাবে আব্বু? তুমি জানো... গাছ ছায়া দিয়ে আমাদের বাড়িটা সূর্যের উষ্ণতা থেকে ঠান্ডা রাখে। আবার এই গাছ তোমার আমার ত্যাগ করা দূষিত কার্বনড্রাই অক্সসাইড গ্রহণ করে নির্মল বিশুদ্ধ অক্সিজেন দেয়। যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমরা গ্রহণ করে বেঁচে থাকি।

জিহাদ উৎসুক দৃষ্টিতে তার আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল... আর... আর কি উপকার করে আব্বু গাছ আমাদের? জীবন বলল গাছের উপকারের কী শেষ আছে বাবা... গাছের শুকনো পাতা শাখা দিয়ে আমাদের রান্নাবান্না করার জন্য যে খড়ির দরকার হয় সেই জ্বালানির অভাবটা মেটে। তাছাড়া নানান অসুখ-বিসুখ ও অভাবের দিনে দুঃসময়-দুর্দিনে একটা গাছ বিক্রি করলেও যে টাকা পাওয়া যায় তাতে প্রয়োজন মেটে। তাছাড়া এসব গাছপালা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। এই যে তুমি স্কুল থেকে এসে খাবার না পেলে ফল পেড়ে খাও, কি খাও না! জিহাদ একটু লজ্জা পেয়ে হেসে ওঠে বলল, হুম।

তাতে তোমার ক্ষুধা নিবারণ হয় দেহে নতুন শক্তি আসে... আসে না বল? জিহাদ বলল, হুম আসে। তারপর ধর বাড়ির আশপাশে যাদের ফলের গাছ নেই তারাও তো আমাদের গাছের দু-একটা ফল খেতে পারে। তারপর তোমার ওই সব পাখি নানান ফল খেয়ে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করে। গরিব-দুঃখী, পাখিদের আমাদের খাদ্য, অর্থ সম্পদ আর ফল সব কিছুতে তাদের পূর্ণ হক আছে। এ যাবতীয় সব কিছুই মহান আল্লাহর নেয়ামত। গরিব-দুঃখী কিংবা পাখিরা যত খাবে কমবে না বরং আল্লাহ আরও বাড়িয়ে দিবেন।

সেটা তো ঠিক, কিন্তু আব্বু তোতা পাখিগুলো খুব দুষ্টু। ওরা আমার পাকা ডাসা ডাসা পেয়ারাগুলো সব খেয়ে যায়। জীবন একটু হেসে উঠে বলল ওরাও যে তোমার মতোই ডাসা পেয়ারা খেতে পছন্দ করে বাবা। জিহাদের আম্মু রেবেকা বলল শুনলে তো বাবা জিহাদ...তোমার আব্বুর মুখে এসব গাছ আমাদের কত প্রয়োজনীয়...? জিহাদ বলল হুম আম্মু গাছ আমাদের অনেক উপকারী। আমিও বড় হয়ে আব্বুর মতো গাছ লাগাব ভালো হবে না আম্মু? হুম খুব ভালো হবে এই তো আমাদের সোনা ছেলে। জিহাদ বলল, জানো আব্বু আমাদের নিমগাছে ঘুঘু পাখিদের ছানা ফুটেছে। বাহ বেশ তো তা হলে তো তোমার আরও নতুন সঙ্গী বাড়লো। জিহাদ হেসে বলল হুম, জান আব্বু ঘুঘু পাখির ঘুঘু ঘুঘু ডাক শুনতে আমার না খুব ভালো লাগে। আমিও তোমার মতো খেতে বসলে খাবার ছড়িয়ে দিই ওদের আব্বু। ওরা সব গাছ থেকে উড়ে আসে খেতে। জীবন শুনে বলল, খুব ভালো বাবা। এটা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। অসহায় জীবদের প্রতি মায়া দেখালে মহান স্রষ্টা খুশি হন। ওই দিন সন্ধ্যা নামতেই আকাশের পশ্চিম কোণে মেঘ জমে তুমুল ঝড় উঠল। বহু বাড়িঘর গাছপালা ভেঙে পড়ল। ভোরবেলা জিহাদের ঘুম ভাঙতেই দৌড়ে গেল নিমগাছের তলে। গিয়ে দ্যাখে বাসা ভেঙে পড়ে আছে। ঘুঘুর ছানা দুটো ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে মারা গেছে। ছানা দুটো হাতে নিয়ে ভীষণ কান্না ধরলো জিহাদ। সে কান্না আর থামে না। জিহাদের আব্বু আম্মু শান্ত করার জন্য বোঝালো আর কেঁদো না। দেখবে কিছুদিন পর ঘুঘুরা আবার বাসা বেঁধে ডিম পেড়ে ছানা তুলবে। তারপর জিহাদের সেই কান্না থামে... সত্যিই কিছুদিন যেতে না যেতেই ঘুঘু পাখিরা ডিম পেড়ে আবার ছানা তুলল। তা দেখে জিহাদের মুখে আবার হাসি ফিরে এলো।

সর্বশেষ খবর