একনজরে
জালালউদ্দিন রুমি
জালালউদ্দিন রুমি কবিতার মাধ্যমে যে ভালোবাসা আর প্রেমের বার্তা তুলে ধরতে চেয়েছেন তা ভাষা ও জাতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি তাঁর কাব্যে গুরুত্বপূর্ণ দর্শন দিয়েছেন যা সমগ্র মানবজাতির আত্মার রহস্যের বিষয়। কাব্য-সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি গদ্যও রচনা করেছেন। তার গদ্য সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে কিছু সংলাপ, যেগুলোর মানসম্পন্ন অনুবাদ করেছেন এ জে আরবেরি। রুমি আফগানিস্তানের বলখ শহরে ১২০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ বাহাউদ্দিন ছিলেন সে যুগের একজন বিখ্যাত বুজুর্গ আলেম। পিতার সঙ্গে পবিত্র হজ পালনের পর সিরিয়া গমন করেন। শেষ পর্যন্ত পূর্ব রোমে সালজুকি বংশের দ্বাদশতম শাসক, সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের (৬১৬-৬৩৪ হিজরি) আমন্ত্রণে তাঁর রাজধানী বর্তমান তুরস্কের কুনিয়ায় গমন করেন এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন। রুমির জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে ১২৪৪ সালে। সে সময় তিনি একজন অতি আশ্চর্যজনক ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসেন। তাঁর নাম শামস আল-দীন তাবরিজ বা শামস-ই তাবরিজ। শামস রুমিকে আধ্যাত্মিক প্রেমের সবক দেন যা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে রুমির মাঝে।
-সাহিত্য ডেস্ক
১
কামনা
খাদ্য ও পানীয়ের চেয়ে আমি অধিক কামনা করি তোমাকে
আমার দেহ, আমার বোধ, আমার মন তোমার স্বাদ পেতে ক্ষুধার্ত,
যদিও তুমি সমগ্র পৃথিবীর
কিন্তু আমি আমার হৃদয়ে তোমার উপস্থিতি অনুভব করতে পারি,
নীরব আবেগে আমি প্রতীক্ষা করি কেবল একটি ভঙ্গিমার,
আমার ওপর একবার ফেলা তোমার দৃষ্টির।
তোমার শব্দ উচ্চারণ করো, তোমার কণ্ঠ নয়,
এটা বৃষ্টি, যা ফুল ফোটায়, বজ্র নয়,
প্রেমের নীরবতায় তুমি জীবনকে জ্বলে উঠতে দেখবে।
২
আমার প্রেয়সী
জেনে রাখো, আমার প্রেয়সী সবার দৃষ্টির আড়ালে,
জেনে রাখো, সে সকল বিশ্বাসের বিশ্বাস থেকে বহুদূরে,
জেনে রাখো, আমার হৃদয়ে সে চাঁদের মতো স্বচ্ছ,
জেনে রাখো, সে আমার দেহ ও আত্মার জীবন।
যে বন্যা এখনো আসেনি, আমি সেই বন্যার পানিতে ভিজে গেছি,
যে কারাগার এখনো অস্তিত্বে নেই, আমি সেই কারাগারে বন্দি,
আমি দাবা খেলিনি, কিন্তু ইতোমধ্যে কিস্তিমাৎ করেছি
এক পাত্র মদিরার স্বাদ না নিয়েও আমি মাতাল হয়েছি,
যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ না করেও আমি আহত ও মৃত।
এখন আমি ছবি ও বাস্তবের পার্থক্য করতে পারি না,
ছায়ার মতো আমি এই আছি তো এই নেই,
আমি নিজেকে ভালোবাসলে তোমাকেই ভালোবাসি,
আমি তোমাকে ভালোবাসলে নিজেকেই ভালোবাসি।
আমার বিষাদের বিলাপ আমার আত্মাকে যন্ত্রণাকাতর করছে।
এই ভালোবাসাকে আমি মানবিক প্রেম বলতে
এবং ঈশ্বর ভীতিকে স্বর্গীয় বলতে আমি লজ্জিত।
৩
জেগে উঠা আবেগ
হে ঈশ্বর,
সকল প্রেমিককে তুমি পরিতৃপ্ত করে দাও,
তাদের জীবনে প্রেমের সুখ সমাপনী দাও,
উৎসবে পূর্ণ করে দাও তাদের জীবন,
তোমার প্রেমাগ্নিতে তাদের হৃদয়কে নাচতে দাও।
হে আমার মধুর প্রেয়সী,
তুমি আমার আবেগকে জাগ্রত করেছো,
তোমার স্পর্শ আমাকে কামনায় পূর্ণ করেছে,
আমি আর তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন নই।
এই যে সময়, এগুলো মূল্যবান মুহূর্ত,
তোমাকে অনুনয় করি, আমাকে প্রতীক্ষায় রেখো না,
আমাকে তোমার মাঝে লীন হতে দাও।