শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেয়ালের বুদ্ধি

নকুল শর্ম্মা

শেয়ালের বুদ্ধি

পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট্ট এক গ্রাম। যেন রূপকথায় ভরা মানুষের জীবন কাহিনি। বন্য জীব জানোয়ারের উপদ্রব লেগেই থাকত সেই গ্রামে। লোকসংখ্যাও তেমন ছিল না। যারাও ছিল, সবাই ভয়ে ভয়ে থাকত।

সেই গ্রামেই বাস করত এক বুড়ি আর তার নাতনি।

মা-বাবাহীন নাতনিকে বুড়িই লালন-পালন করত। সেই বুড়ির ভিটা ছাড়া জায়গা জমিন ছিল না। তবে বুড়ির বাড়িতে ছিল লম্বা একটা তালগাছ। ঘরের পাশেই সেই তালগাছটি। গাছ থেকে যখন পাকা তাল পড়ত তখন সে কী আওয়াজ। ধপাস করে বিকট শব্দ হতো। আর সেই পাকা তাল বাজারে বিক্রি করে বুড়ি সংসার চালাত।

সন্ধ্যা হলেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে বুড়ি ও নাতনি শুয়ে শুয়ে গল্প করত। সে এক বিরাট কাহিনি। গল্প না বললে বুড়ির নাতনি কান্নাজুড়ে দিত। এক দিন বুড়ির শরীরটা খুব ভালো ছিল না বলে গল্প করতে ভালো লাগছিল না। কিন্তু তা কী হয়? বুড়ির নাতনির সেই বায়না। গল্প শোনাতে হবে নইলে নাতনি ঘুমাবে না বলে জুড়ে দিল সে কী কান্না! কিছুতেই বুড়ি শান্ত করতে পারছে না। এদিকে বুড়ির ঘরের পাশে তালগাছের নিচে বসে একটা বাঘ ফন্দি আঁটছে কী করে বুড়ির ঘরে ঢুকে মানুষের মাংস খাবে।

আর এদিকে বুড়ি নাতনিকে নানান কথা দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে যেন কান্না থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। না, কিছুতেই কান্না থামাচ্ছে না। সেদিকে বাঘ বেচারাও সব শুনছে। বুড়ি শেষে উপায় না দেখে নাতনিকে ভয় দেখিয়ে বলছে, কান্না থামা নইলে বাঘে ধরবে। নাতনি বলে আমি বাঘ ডরাই না। তখন বুড়ি অনেক কিছুর ভয় দেখাল তবু নাতনির কান্না থামে না। হঠাৎ বুড়ি বলে উঠল এবার কান্না না থামালে তো ট্যাপায় ধরব। এ কথা শোনা মাত্র নাতনি কান্না বন্ধ করে দিল। এদিকে এই কথা বাঘও শুনতে পেল। বাঘ ট্যাপার কথা শুনে চমকে উঠল এই ভেবে যে আমি বাঘ মানুষ খাই আমাকে ভয় পায় না কিন্তু ট্যাপাকে ভয় পায়, সেটা আবার কেমন প্রাণী?

নাতিন বুড়িকে প্রশ্ন করে ট্যাপা কোথায় থাকে? কী করে? বুড়ি তখন গম্ভীর গলায় বলে ট্যাপা থাকে সাত সমুদ্দুর পার হয়ে পরীর দেশের বন জঙ্গলে। এরা ভীষণ রাগী ও বদমেজাজি। এরা গাছের মাথায় লম্বা পা ফেলে হেঁটে হেঁটে বেড়ায় বাঘের মাংস খাবে বলে।

বাঘ সেই কথা শুনে ভয়ে মন্ত্র পড়ছে, ‘হায়রে ট্যাপা হোস নে ক্ষ্যাপা খাসনে আমার রক্ত, তোকে আমি সালাম করে হবো তোরই ভক্ত।’ কিন্তু তাতে কী আর বাঘের ভয় যায়? ভাবছে কখন জানি ট্যাপা এসে বাঘের রক্ত খায়। এমন বাঘ ভাবছে তখনই একটা পাকা তাল ধপাস করে এসে পড়ল বাঘের পিঠে। বাঘ ভাবল এই বুঝি ওকে ট্যাপায় ধরল। বাঘ তখন প্রাণ নিয়ে দিল ছুট। ছুটতে ছুটতে বলছে...

‘আজব প্রাণি দেখি নাই, ট্যাপা নাকি নামটি ভাই, ধরতে পারলে রক্ষে নাই, প্রাণটি নিয়ে তাই পালাই’।

বাঘ তো প্রাণপণে ছুটছে পথে দেখা হলো একটা সিংহের সঙ্গে। সিংহ বলে একি বাঘ তুমি এমনভাবে দৌড়াচ্ছো কেন? বাঘ বলে বাঁচতে হলে তুমিও দৌড়াও। যেই কথা সেই কাজ। বাঘের পিছু সিংহও তখন প্রাণপণে ছুটছে কিছু না বোঝেই। ছুটতে ছুটতে যখন বনের মধ্যে চলে আসছে তখন দেখা মেলে এক ভাল্লুকের সঙ্গে। ভাল্লুক আর কিছু জিজ্ঞেস করার সময় পায়নি। কিছু না বোঝেই বাঘ ও সিংহের সঙ্গে সমানতালে দৌড়াচ্ছে, কেন দৌড়াচ্ছে তার কোনো কিছুই জানা নেই। দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় ভোর হয়ে আসছে এমন সময় দেখা মেলে এক ধূর্ত শেয়ালের সঙ্গে। তখনো ওরা দৌড়াচ্ছে। শিয়াল তখন পথ আগলে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে? কেন তোমরা এমন দৌড়াচ্ছো?

এদিকে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুকও পরিশ্রান্ত আর বেশ দূরেও চলে আসছে তাই শিয়ালকে সবকিছু খুলে বলল।

শেয়াল তখন কিছুটা তিরস্কারের সুরে বলল তোমরা সব ভীতুর দল। না দেখেই এমন করে দৌড়াচ্ছো? বাঘ বলল তবে কী করব বল? জবাবে শেয়াল বলে চল আমরা দেখে আসি সেই আজব প্রাণীটাকে। বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক বলছে না বাপু আমাদের প্রাণের ভয় আছে, আমরা আর সেদিকে যাচ্ছি না। তবুও শেয়াল অনেক কাকুতি মিনতি করে বলল দেখ আমি হলাম পুচকে শেয়াল আর তুমি বাঘ বনের রাজা, তোমার এত ভয় থাকলে চলে? অবশেষে ওরা শেয়ালের সঙ্গে রওয়ানা দিল আবার পেছনে। এদিকে বেলাও বেড়ে গেছে, এমন সময় হঠাৎ একটা হেলিকপ্টার বিকট শব্দ করে বনের গাছপালা নাড়িয়ে উড়ে আসছে দেখে বাঘ ভাবল এই তো ট্যাপা চলে আসছে। প্রাণ যদি বাঁচাতে হয় তবে পালাও। এই বলে বাঘ, সিংহ আর ভাল্লুক বনের পথ ধরে প্রাণপণে দৌড়াতে লাগল। আর এদিকে ধূর্ত শেয়াল টুপকরে তার গর্তে ঢুকে পড়ল। দুষ্ট শেয়াল মনে মনে ভাবতে লাগল এই সুযোগে আমিই হবো বনের রাজা। এদিকে বাঘ, সিংহ আর ভাল্লুকের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। শেয়াল আগে থেকেই হেলিকপ্টার নামক যন্ত্রটা চিনতো তাই ওর এতটা ভয় ছিল না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর